বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার আবেদন নাকচ করার দেড় মাস পর সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমার আবেদন করলেই কেবল তাকে এই সুযোগ দেয়া হতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপি নেত্রীর পক্ষ থেকে এই ধরনের আবেদন করা হবে কি না।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বোন সেলিমা ইসলাম নিউজবাংলাকে প্রথমে বলেন, ‘মিডিয়ার সঙ্গে এই নিয়ে আলাপ করতে চাচ্ছি না আসলে।’
পরে বলেন, ‘উনার জন্য যা মঙ্গলের, তাই করা হবে।’
তাহলে কি ক্ষমার আবেদন করা হবে? এমন প্রশ্নে জবাব আসে, ‘উনি শারিরীকভাবে অসুস্থ। স্টিল নাও ভেরি ডিফিকাল্ট সিচুয়েশনে আছেন। আপাতত এই বিষয়ে আমরা ভাবিনি।’
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও পরে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করা তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার এ বিষয়ে মন্তব্যই করতে নারাজ। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলি না। আই এম স্যারি।
প্রসঙ্গটি এসেছে জাতীয় সংসদে আইমন্ত্রীর বক্তব্যে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কারাগার থেকে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয় দুটি শর্তে, যার একটিতে বলা ছিল, তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
তবে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় বিদেশে নেয়ার আবেদন করা হয়, যেটি গত ৯ মে নাকচ করেছে সরকার।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রসঙ্গটি নিয়ে কথা বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘ওনাকে (খালেদা) যদি বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়, তবে তাকে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে ৪০১ ধারায়। অবশ্যই তাকে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে।’
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মন্তব্য জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আপনারা অবগত। তার মুক্তিই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। তবে তিনি ক্ষমা চাইবেন কি নাম সে বিষয়ে বলতে পারব না। এটা ম্যাডামের নিজস্ব ব্যাপার, তার পরিবারের ব্যাপার। এটার সঙ্গে রাজনীতি নেই।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ৫ বছরের সাজা পেয়ে কারাগারে যান। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দেয়া এই সাজা পরে হাইকোর্ট বাড়িয়ে ১০ বছর করে।
এই সাজার বিরুদ্ধে আপিল শুনানি আটকে আছে আপিল বিভাগে।
এর পর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি নেত্রীর সাজা হয় ৭ বছর। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে করা আপিল শুনানি আটকে আছে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে।
বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের নেত্রীকে রাজপথের আন্দোলনের পাশাপাশি উচ্চ আদালতে আইনি লড়াইয়ে মুক্ত করার ঘোষণা ছিল। কিন্তু দুটি প্রক্রিয়াতেই তারা ব্যর্থ হওয়ার পর উদ্যোগী হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পরিবার।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ বিশেষ বিবেচনায় মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল থেকে বাড়ি ফেরেন খালেদা জিয়া
২০২০ সালের শুরুর দিকে খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করা হয়। আর সরকারপ্রধানের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য দণ্ড স্থগিত হওয়ার পর ওই বছরের ২৫ মার্চ তিনি সাময়িক মুক্তি পান।
এরপর সাময়িক মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস করে দুই দফায় বাড়ানো হয়।
এর মধ্যে গত এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ২৮ এপ্রিল তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনা থেকে সেরে ওঠা বিএনপি নেত্রীকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দিতে সরকারের কাছে আবার আবেদন নিয়ে যায় তার পরিবার।
এরপর খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পাসপোর্ট নবায়ন করা হয়। এতে আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে যে, তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে।
তবে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ৯ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, আইন মন্ত্রণালয় তাদের জানিয়েছে, চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আইনি কোনো সুযোগ নেই।
সেদিন তিনি বলেন, ‘দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়ার বিধান আইনে নেই বলে মতামত দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তার আলোকেই এই সিদ্ধান্ত।’
সরকার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়ারও ৪০ দিন পর গত ১৯ জুন হাসপাতাল থেকে গুলশানে নিজের বাসভবন ফিরোজায় ফিরে আসেন।
তবে খালেদা জিয়ার মুক্তি, তাকে বিদেশে নেয়ার আবেদন-এসব প্রসঙ্গে বিএনপি নেতারা বরাবর চুপ থাকার নীতি নিয়েছেন। প্রশ্ন করলেই তারা বলেন, বিষয়টি পরিবার দেখছে। এমনকি তার মুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করার বিষয়টি প্রথমে স্বীকারই করতে চাননি দলের নেতারা।
বিএনপির নেত্রীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না, এই প্রশ্নে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি সাময়িক মুক্তিতে রয়েছেন। সেই আর্জি জানিয়েছেন তার পরিবার। এখন কী করবেন সেটা পরিবারই বলতে পারে কেবল।’