করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের ঘোষিত লকডাউন এখন তামাশায় পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। করোনা প্রতিরোধী টিকা সংগ্রহেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কোনো সমন্বয়হীনতা নেই বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
‘ইতোমধ্যে সরকার ৭ দিনের জন্য পুনরায় লকডাউন ঘোষণা করেছে, যা এখন তামাশায় পরিণত হয়েছে। সরকারের অযোগ্যতা এবং জবাবদিহিহীনতার কারণে লকডাউন সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
‘গরিব সাধারণ মানুষ, দিন আনে দিন খায় শ্রেণির মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা না করে, অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরের শ্রমিক ও কর্মরত ব্যক্তিদের নগদ টাকা ট্রান্সফারের ব্যবস্থা না করে লকডাউন কখনোই কার্যকর হতে পারে না।’
লকডাউনকে বিএনপি তামাশা বলছে কেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কেন বলব না? আপনারা এর আগে লকডাউন দিলেন। প্রথমে লকডাউন নয়, সাধারণ ছুটি ঘোষণা করল। তখন দেখা গেল, শ্রমিকরা একবার গেল আবার ফিরে এলো।
‘আবার গতকালের সিনটা দেখেন, জেলার সঙ্গে তারা গাড়ির যোগাযোগটা বন্ধ করে দিল, এখন লকডাউনের ৭ দিনের ছুটি মনে করে একদল লোক হেঁটে বাড়ির দিকে যাচ্ছে, আরেক দল ঢাকা ফিরছে। এগুলো তারা আগে চিন্তা করবে না, কী হতে পারে।’
টিকা সংগ্রহ নিয়েও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা চলছে বলে অভিযোগ তোলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘করোনার ভ্যাকসিন সংগ্রহের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য প্রমাণ করেছে যে, সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই।’
সবকিছু এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। তাই এ সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানান তিনি।
জনগণ সহযোগিতা করলে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে- স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণ তো সহযোগিতা করতে চায়। আপনারা তো জনগণকে সহযোগিতা করার কোনো সুযোগ দিচ্ছেন না। আপনাদের যে চরম দুর্নীতি-অদক্ষতা, সে কারণে করোনা পরিস্থিতি একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চেলে গেছে।’
করোনা নিয়ন্ত্রণে ভারতের সাম্প্রতিক সাফল্য তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভারতে করোনা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। কিন্তু তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কারণে তা এখন ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রতিটি দেশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে করোনা সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছে। আর আমাদের সরকার কীভাবে দুই পয়সা ইনকাম হবে, সেই চিন্তা গোটা জাতিকে আজ চরম বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
‘বিএনপির ভবিষ্যৎ অন্ধকার’- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা এত উদ্বিগ্ন কেন। এ কারণে যে তারা মনে করে, বিএনপি একমাত্র রাজনৈতিক দল, যারা জনগণের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত করে। এ কারণে যে বিএনপি একমাত্র দল, যারা এই ভয়াবহ দানব সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
‘আমি বলতে চাই, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ ঘোরতর অমানিশার অন্ধকারে নিমজ্জিত। আওয়ামী লীগ যে কাজগুলো করছে, তা গোটা জাতিকে অন্ধকারে দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জাতির যা কিছু ভালো, সুন্দর ছিল তা ধ্বংস করে দিয়েছে।’
কবি নির্মলেন্দু গুণের একটি কবিতার কয়েকটি পঙক্তি উদ্ধৃত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সময়ের অপেক্ষা। মানুষ যেই দিন জেগে উঠবে। সেই দিন আওয়ামী লীগ পালাবার পথ খুঁজে পাবে না।’
শনিবার অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো জানাতে আজকের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।