জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সেমিনারে বক্তব্য দেয়ার সময় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে হুমকি দিয়েছেন ছাত্রদলের এক সহসভাপতি।
বিএনপির শরিক জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে ‘উল্টাপাল্টা’ বক্তব্য রাখেন বলে অভিযোগ করে ওমর ফারুক কাউসার নামে এক নেতা বলেন, ‘আপনি আমাদের নেতাকে নিয়ে কথা বলবেন না। যদি বলেন, পরবর্তী সময়ে কিছু হলে কিন্তু আমরা দায়ী না।’
সেমিনারের আয়োজক ছিল এডুকেশন রিফর্ম ইনিশিয়েটিভ (ইআরআই) নামে বিএনপি সমর্থক একটি সংগঠন। বিষয় ছিল ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী: শিক্ষায় প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি এবং করোনাকালীন শিক্ষা বাজেট: ২০২১-২০২২’।
আলোচনার একপর্যায়ে বিএনপি, তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন জাফরুল্লাহ। মন্তব্য করেন, ‘বিএনপি চলে লন্ডন থেকে আসা ওহি দিয়ে।’
তারেক রহমানকে দুই বছর চুপচাপ বসে লন্ডনে পড়ালেখার পরামর্শও দেন জাফরুল্লাহ।
এ সময় শ্রোতাদের আসনে থাকা ছাত্রদল নেতা কাউসার তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ওস্তাদ স্লামাইকুম।’
মুহূর্তে সেমিনার কক্ষে উপস্থিত সবাই চমকে যান। সেই ব্যক্তি বলতে থাকেন, ‘আপনি বিএনপির কী? আপনি কে যে আপনার কথা শুনতে হবে? আপনি আমাদের নিয়া উল্টাপাল্টা কথা বলেন?’
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আপনি আগে কথা তো শোনেন।’
তখন ছাত্রদল নেতার সঙ্গে থাকা একজন বলেন, ‘আপনি জয়রে (প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়) নিয়া বলেন।’
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আপনাদের ভালোর জন্য বলি। আপনারা আপনাদের ভালো বোঝেন না।’
ছাত্রদল নেতা কাউসার বলেন, ‘না না, আমরা অবশ্যই বুঝি, আমরা আমাদেরটা বুঝি, আপনি আপনারটা বোঝেন। আপনি আমাদের নেতাকে নিয়ে কখনও এভাবে কথা বলবেন না। আপনি আপনাকে নিয়ে কথা বলেন, যদি বলেন, পরবর্তী সময়ে কিছু হলে কিন্তু আমরা জানি না।’
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘কোনো কিছু হবে না, আপনারা দায়ী হবেন কেন?’
কাউসার বলেন, ‘ধন্যবাদ।’
এই কথোপকথনের পর কাউসার তার সঙ্গীদের নিয়ে সেমিনার কক্ষ ত্যাগ করেন।
বিএনপি সমর্থক একটি সংগঠনের আলোচনায় বক্তব্য রাখছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরীএর আগে যা যা বলেন জাফরুল্লাহ
এই উত্তেজনা তৈরির আগে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘এই দেশে অনেকেই, এই সেমিনারেও অনেকেই বলেছেন যে, বিএনপি এলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। হবে না। বিএনপির তো আসারই ইচ্ছা নাই। বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে হবে, এটার তো একটা ইচ্ছা থাকতে হবে, আগ্রহ থাকতে হবে, সঙ্গে সঙ্গে তাকে পরিকল্পনা করতে হবে, আমি কী কী পরিবর্তন আনব। পরিবর্তন আনার ব্যাপারে তো আলোচনা থাকতে হবে।’
যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি পরিচালিত হচ্ছে আল্লাহর ওহি দিয়া। সেই ওহি লন্ডন থেকে ভেসে আসে তিনারা একেকজন।’
সরকারের পতন ঘটাতে হলে বিএনপিকে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হতে হবে বলেও মনে করেন জাফরুল্লাহ।
বলেন, ‘আপনারা কেউ খালেদা জিয়ার চেহারার দিকে লক্ষ্য করে দেখেছেন? ওনার একটা কী রকম ডিপ্রেশনের ভাব। আপনারা যদি ছবিগুলো দেখেন… এই ডিপ্রেশন হলো আলঝেইমারের পূর্ব লক্ষণ। তারা যেভাবে ওনাকে জীবিত রেখেও মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে, সেটা বিএনপির লোকেরা হয়তো উপলব্ধিই করে না।’
বিএনপি যদি খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়, তাহলে কী করতে হবে, সেই পরামর্শও দেন জাফরুল্লাহ। বলেন, ‘খালেদা জিয়ার তারা যদি মুক্তি চায়, আমি বারবার বলেছি, তারেক দুই বছর চুপচাপ বসে থাকুক। পারত বিলাতে লেখাপড়াতে যুক্ত হয়ে যাক। সেখানে বহুভাবে লেখাপড়া হয়।’
সেমিনারে সে সময় উপস্থিত ছিলেন আয়োজন সংগঠন ইআরআই এর চেয়ারম্যান, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন, বিএনপি শাসনামলে আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরীও।
জাফরুল্লাহর সঙ্গে ছাত্রদল নেতার বাদানুবাদের সময় তারা নীরব থাকেন।
ছাত্রদল নেতা তার সঙ্গীদেরকে নিয়ে সেমিনারস্থল ত্যাগ করার পর জাফরুল্লাহ আবার কথা বলতে শুরু করেন।
‘শিক্ষার সবচেয়ে ক্ষতি করেছে সরকার’
এমন মন্তব্য করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘শিক্ষা ব্যবস্থা দুই জন মন্ত্রী সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। একজন কমিউনিস্ট মন্ত্রী ঢুকেছিলেন আওয়ামী লীগে (নুরুল ইসলাম নাহিদ)। এই কমিউনিস্ট মন্ত্রী তার আমলে দিলেন হাজার হাজার জিপিএ-ফাইভ। পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রী হয়ে আসলেন ডাক্তার সাহেবা (দীপু মনি)। তিনি এমন এক প্রেসক্রিপশন দিলেন.. এত ঝামেলা করার দরকার কী? স্কুল কলেজ বন্ধ থাকুক। করোনার অজুহাতে স্কুল-কলেজ বন্ধ। জাতিকে শিক্ষার দুর্বল করে দিতে বিদেশি মদত ও তো থাকতে পারে।’
এহছানুল হক মিলন বলেন, ‘শিক্ষাবিদদের প্রত্যাশা ছিল এই অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ দেয়া। কিন্তু গতানুগতিকভাবে এ বছরও শিক্ষায় বরাদ্দ হয়েছে ১১.৯২ শতাংশ। জাতীয় আয়ের (জিডিপি) হিসাবে ২.০৮ শতাংশ অর্থাৎ বড় বাজেটে সীমিত বরাদ্দ।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, “১৪ মাস ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এইভাবে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে পারে তা পৃথিবীর মানুষ কখনও দেখেনি। এমন একটা পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী বলছেন ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ব্যাপারে আমাদের চাপ নেই।’ এরা কিসে যে চাপ বোধ করে তা বোঝা যায় না।”