জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ২০ জুলাই। সম্মেলন হলেও সেদিন কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি ছাত্রলীগ। শিগগিরই কমিটি ঘোষণা হবে জানালেও পেরিয়ে যায় প্রায় দুই বছর। এই দীর্ঘ সময়েও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কমিটি দিতে পারেনি ছাত্রলীগ। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন নেতা-কর্মীরা।
কমিটির জন্য জবির বেশ কিছু ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধরনা দিলেও কাজে আসেনি তাদের চেষ্টা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্রলীগের কমিটিতে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ জট।
এই জট নিরসনে দ্রুত কমিটি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জবির ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক শরীফ-সিরাজ কমিটি ৩ অক্টোবর ২০১২ সালে এক বছরের জন্য অনুমোদন পায়। এক বছরের জন্য দায়িত্ব নিলেও পার হয়ে যায় ৪ বছর। সর্বশেষ কমিটি হয় ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর। সে সময় মো. তরিকুল ইসলামকে সভাপতি ও শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৯ সদস্যের কমিটি করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
সেই কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই একের পর এক নেতার বিরুদ্ধে উঠতে তাকে অভিযোগ। একটা পর্যায়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বিরাগভাজন নেতা-কর্মীরদের বিভিন্ন ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়।
সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতাকে পরে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকায় ছাত্রলীগ থেকেই বহিষ্কার করা হয়। এরপর বাড়তে থাকে নেতাদের মধ্যে অন্তঃকোন্দল।
এরপর প্রেমঘটিত এক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে দিনভর সংঘর্ষের পর ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি শোভন-রাব্বানী কমিটি জবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্রলীগের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়া হয়।
জবিতে দ্রুত ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের জন্য পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা দৌড়ঝাঁপ করছেন দীর্ঘদিন।
পদপত্যাশী এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের এই অবস্থার দ্রুত সমাধান হলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। আর কত দিন ঘোরা যায় তাদের (কেন্দ্রীয় দুই নেতা) পেছনে। তারা কমিটি নিয়ে মুখও খোলেন না। কবে দেবে সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট কথাও বলেন না। আমাদের তো ক্যারিয়ার আছে? নেতা হলে রাজনীতি করব, না হলে ব্যবসাবা চাকরি করতে হবে।’
২০১২ সালের পরে যারা (৭ম ব্যাচ) বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত আছেন। এরাও পরিচয় ছাড়া রাজনীতি করে চলেছেন। ৭ম থেকে ১১তম ব্যাচের বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন আবার অনেক কর্মী পদ-পদবির অর্থাৎ পরিচয় পাওয়ার আশায় এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতিতে যুক্ত আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ছাত্রলীগ কর্মী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে ভার্সিটি জীবনের প্রথম থেকে সক্রিয় রাজনীতি করে এখনও পরিচয়হীন আছি। আশায় আছি নতুন কমিটি হলে পদ পাব। এ জন্য ১ বছরের গ্যাপও হয়েছে। কিন্তু কবে কমিটি হবে জানি না।’
জবির বিজ্ঞান অনুষদের এক ছাত্রলীগ কর্মী জানান, গত সাড়ে তিন বছরেও তিনি রাজনীতিতে নিজের পরিচয় পাননি। নতুন কমিটিতে পদ পাবেন, এমনটা আশা তার।
জবি ছাত্রলীগের এই অবস্থা নিয়ে সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটা দীর্ঘ সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে, এই দায় সম্পূর্ণটাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। তারা যথাসময়ে কমিটি দিতে পারেনি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতেও তাদের সময় লাগে।’
তিনি বলেন, ‘তারা কি কারণে জগন্নাথে কমিটি আটকায় রাখে আমি বুঝি না। এটা তারাই ভালো বোঝে।’
তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করে সাবেক এই নেতা বলেন, ‘আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারিনি, এটা আমাদের ব্যর্থতা ছিল।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি (শরিফ-সিরাজ কমিটি) ও যুবলীগের সহসম্পাদক হিমেলুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সব সময় বঞ্চিত হয়ে আসছে। এখনও হচ্ছে।
যথাসময়ে কমিটি না দেয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা যাবেই। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে তথা সংগঠন নেতৃত্ব শূন্যতায় ভুগবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ বরাবরই অবহেলিত ও বৈষম্যের শিকার বলে মনে করেন এই নেতা।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এই অবস্থায় দায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ওপর বর্তায় উল্লেখ্য করে বলেন, জবি ছাত্রলীগকে মূল্যায়ন করে শক্তিশালী সংগঠন করা হোক।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বারবার ফোন করা হলেও তারা কোনো সাড়া দেননি।