আরও এক ছাত্রদল নেতার ছাত্রলীগের পদ পাওয়া নিয়ে ফরিদপুরে তোলপাড় চলছে।
রায়হান রনি নামে এক তরুণ আলফাডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থাকা অবস্থায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়া নিয়ে আলোচনার মধ্যেই মধুখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক নাজমুল হোসেনকে করা হয়েছে মধুখালী উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।
ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতাকে পদোন্নতি দিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা নিয়ে সংগঠনে তৈরি হয়েছে অসন্তোষ।
যদিও নাজমুলের ছাত্রদল সম্পৃক্ততা অস্বীকার করছেন তাকে পদ দেয়া ও সুপারিশ করা ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতারা। নাজমুল নিজেও দাবি করেছেন, তার পরিবার সব সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছে।
ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এও বলেছেন, নাজমুলের ছাত্রদল সম্পৃক্ততার অভিযোগ তারাও শুনেছেন। এটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে ২০১৮ সালে নাজমুলকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে যে প্যাডে ছাত্রদলের সেই কমিটির ঘোষণা করা হয়, তা এখন ছড়িয়ে পড়েছে। আর একে নাজমুল অবশ্য কারসাজি বলছেন।
গত ১২ জুন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তামজিদুল রশিদ চৌধুরী রিয়ান ও ফাহিম আহমেদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে মধুখালী উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এতে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে রবিন মোল্যা ও ইনজামামুল আলম অনিককে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কমিটিতে নাজমুল হোসেনকে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
উপজেলা ছাত্রলীগের নব-নির্বাচিত সভাপতি রবিন মোল্যার দাবি, নাজমুল দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রলীগের রাজনীতি করে আসছেন। সেই হিসেবেই তাকে পদ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘নাজমুল ছাত্রদল করতেন, বিষয়টি আমাদেরকেও অনেকেই জানিয়েছে, তবে খোঁজ নিয়ে এর কোনো সত্যতা পাইনি।’
তবে মধুখালী উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ওমর ফারুক জানান, ২০১৮ সালের উপজেলার রায়পুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের কমিটিতে নাজমুল হোসেন যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন।
২০১৮ সালে ছাত্রদলের কমিটিতে আর তিন বছর পর ছাত্রলীগের কমিটিতে নাজমুল
মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বকু বলেন, ‘নাজমুল হোসেন ছাত্রদলের রাজনীতি করত-এই বিষয়টি জানা নেই। তবে নাজমুল দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ছাত্রলীগের মিছিল মিটিংয়ে তাকে দেখেছি।
এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তামজিদুল রশিদ চৌধুরী রিয়ান বলেন, ‘রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেই নাজমুল হোসেনকে ছাত্রলীগের পদ দেয়া হয়েছে। নাজমুল দীর্ঘদিন যাবৎ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকার সুপারিশেই তাকে পদ দেয়া হয়েছে।’
নাজমুল হোসেন ছাত্রদল করতেন- এমন অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দেন তিনি।
রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর সাত্তার শেখ বলেন, ‘নাজমুল হোসেনের বাড়ি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে। ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রত্যয়ন পত্র পেয়েই নাজমুলকে ছাত্রলীগের পদ দিতে আমি সুপারিশ করেছি।’
নাজমুল হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও ছাত্রদল করার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার দীর্ঘদিন যাবৎ আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। পারিবারিক কারণেই ছোটবেলা থেকেই আমিও ছাত্রলীগের রাজনীতি করে আসছি।’
তিনি বলেন, ‘একটি মহল আমার বিরুদ্ধে এধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। আপনারা এলাকায় এসে খোঁজ নিয়ে দেখেন আমি এবং আমার পরিবারের সম্পর্কে।’
সম্প্রতি ছাত্রদল নেতা রায়হান রনির ছাত্রলীগে পদ পাওয়া নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়। এর মধ্যে গত ১৯ জুন তাকে ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। আর ছাত্রদল তাকে বহিষ্কার করে।