প্রতিহিংসা ভুলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চেয়ারপারসনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব এ আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পরিবার তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে। এই সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে।’
‘সরকারকে আহ্বান জানাব, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাদ দিয়ে এই মহান নেত্রীর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক, তাকে মুক্তি দেয়া হোক। তিনি গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন। লড়াই করেছেন। তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। দেশের উন্নতিতে তার বহু অবদান রয়েছে। তাকে অন্যায়ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে।’
ফখরুল বলেন, ‘আপনারা জানেন, তার (খালেদা জিয়া) করোনা হওয়ার পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। আল্লাহর রহমতে কোভিড থেকে মুক্তি পেয়েছেন।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪২ নং ওয়ার্ডে বেরাইদ এলাকায় বিএনপি মহানগর উত্তরের উদ্যোগে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল। ছবি: নিউজবাংলা
‘কিন্তু দীর্ঘ ৪ বছর তার চিকিৎসা হয়নি। কারাগারে রাখার কারণে তিনি অনেকগুলো রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে প্রথম তার হার্টে সমস্যা তৈরি হয়। তার কিডনিতে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তার লিভারে সমস্যা আছে। তার একটা পুরোনো অসুখ যেটা তাকে অত্যন্ত কষ্ট দেয়—আর্থারাইটিসও রয়েছে। এসব মিলিয়ে উনি অত্যন্ত অসুস্থ। ডাক্তাররা বলছেন, তিনি অত্যন্ত ভারনারেবল অবস্থায় আছেন।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪২নং ওয়ার্ডে বেরাইদ এলাকায় বিএনপি মহানগর উত্তরের উদ্যোগে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।
মহানগর উত্তরের সিনিয়র সহসভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আনজুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এ এফ এম আবদুল আলীম নকির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সহসম্পাদক রওনাকুল ইসলাম টিপুসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
পোস্ট কোভিড জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৭ এপ্রিল খালেদা জিয়া বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন।
৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির ২ মামলায় দণ্ডিত। দণ্ড নিয়ে ৩ বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়।
২০০৮ সালের ৮ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় খালেদার। পরে উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে। ওই বছরই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর বিএনপি নেত্রীকে দেশের বাইরে না যাওয়া ও বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেয়ার শর্তে ছয় মাসের জন্য দণ্ড স্থগিত করিয়ে মুক্তি দেয়া হয়। এরপর দুই দফা বাড়ানো হয় দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হাঁটুর জটিলতা ছাড়াও নানা ধরনের রোগ আছে বলে তার দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে তার চোখেও অপারেশন করা হয়।