বিএনপি আগেই ঘোষণা দিয়েছে, সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে তারা অংশ নেবে না। তাই বিএনপির শরিক দলগুলোও এই নির্বাচন থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখে। এমন পরিস্থিতিতে আসনটিতে আরেকটি একপেশে নির্বাচনের ধারণা করছিলেন ভোটাররা।
তবে সব হিসাব উল্টে দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী। সিলেট-৩ আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য আগামী ২৮ জুলাইয়ের এই উপনির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বলেছেন, নির্বাচনে বিএনপি না এলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন তিনি।
ভোটের মাঠে আছেন আতিকুর রহমান আতিকও। জাতীয় পার্টির এই প্রেসিডিয়াম সদস্য লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন। এই আসনে ২০০৮ সালেও প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি।
দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ একসময় জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মুকিত খান এ আসন থেকে টানা তিনবার নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে মুকিত খানকে হারিয়ে এই আসনে ধানের শীষের পতাকা ওড়ান শফি আহমদ চৌধুরী।
এরপর থেকে জাতীয় পার্টি ক্রমেই দুর্বল হয়ে জনসমর্থন হারাতে থাকলেও এখনও এলাকায় দলটির একটি বড় ভোটব্যাংক রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
বিএনপির ভোটের পাশাপাশি শিল্পপতি শফি চৌধুরীর নিজস্ব ভোটব্যাংকও রয়েছে এলাকায়। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি সরকারবিরোধী মনোভাব কাজে লাগাতে পারলে এই ভোট এবার আরও বাড়বে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী তরুণ হাবিবুর রহমান হাবিব এবারই প্রথম দলীয় মনোনয়ন পেলেও এলাকায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। প্রবাসজীবন ছেড়ে এলাকার মানুষের পাশে রয়েছেন। এর আগের দুটি নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনি। এসব কারণে নিজস্ব পরিচিতি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন হাবিব।
দল ক্ষমতায় থাকা, সরকারের উন্নয় কর্মকাণ্ড, আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর প্রতি মানুষের সহানুভূতি- এসব বিষয়ও তার ভোট বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১১ মার্চ মারা যান সিলেট-৩ আসনের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ২৮ জুলাই এ আসনে উপনির্বাচন হওয়ার কথা।
এই নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থীরা নেমে পড়েছেন আটঘাট বেঁধে। ঢাকা ও বিদেশের পাট চুকিয়ে তিন প্রার্থীই এখন সিলেটে। সব মিলিয়ে সিলেট-৩ আসনে এখন জমজমাট লড়াইয়েরই আভাস পাচ্ছেন ভোটাররা। যে আসনে গত দুটি সংসদ নির্বাচনে তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি।
এই আসনের ভোটার দক্ষিণ সুরমার কুচাই এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই একটি জমজমাট নির্বাচন। যে-ই নির্বাচিত হোক, নির্বাচন যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ হয়। মানুষ যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে।’
জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিক
যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা শেষে সোমবার বিকেলে সিলেট পৌঁছান শফি আহমদ চৌধুরী। এর আগে দুপুরে ঢাকা থেকে দলীয় মনোনয়নপত্র নিশ্চিত করে সিলেট আসেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। এর এক দিন আগে রোববার সিলেট আসেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। জানা গেছে, তিনজনই মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন।
সিলেটে পৌঁছে নগরীর নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শফি আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি সব সময় দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করার চেষ্টা করেছি। অতীতে তার প্রমাণ পেয়েছেন আমার এলাকার মানুষ। বর্তমান উপনির্বাচনে এলাকাবাসীর ডাকে সাড়া দিয়ে দলের ঊর্ধ্বে গিয়েই নির্বাচনে অংশ নিয়ে এ অঞ্চলের উন্নয়ন করতে চাই।’
শফি বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে বিএনপি আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও আমি নির্বাচন করব। আমার হারানোর কিছু নেই। এ অঞ্চলের মাটি ও মানুষের উন্নয়নের রাজনীতি করেছি আজীবন। যত দিন বেঁচে আছি এই ধারা অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা চাই।’
শফি আহমদ চৌধুরী ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সিলেট-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের কাছে পরাজিত হন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী
সোমবার দুপুরে বিমানের একটি ফ্লাইটে সিলেট আসেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। ওসমানী বিমানবন্দরে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
সেখানে সাংবাদিকদের হাবিব বলেন, ‘সবার দোয়া আর সার্বিক প্রচেষ্টায় আমাকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।’
এ সময় নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
হাবিব বলেন, ‘দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে সিলেট-৩ আসনের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন। এ জন্য আমি সিলেটের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
সিলেট-৩ আসনের মানুষের কল্যাণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন পাওয়ার পরপরই আমি সিলেট-৩ আসনের প্রয়াত এমপি কয়েস ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে দোয়া নিয়েছি। তিনি আমাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। সিলেট-৩ আসন এবারও প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে চাই।’
রোববার দুপুরে বিমানের একটি ফ্লাইটে সিলেট আসেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। বিমানবন্দরে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভ্যর্থনা জানান জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।