শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ রুদ্ধ না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, করোনা ভাইরাসের এই মহাদুর্যোগের মধ্যেও বাগাড়ম্বর বক্তব্য প্রদান ছাড়া সরকার জনকল্যাণে কোনো কাজ না করেনি।
‘সরকার বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর বেপরোয়া গতিতে জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। করোনা মোকাবেলায় সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী সরকার আরও বেশি আগ্রাসী পথ অবলম্বন করে বিরোধী দলকে দমন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
তিনি বলেন, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দিনে সরকার নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে সরকারের এই ফ্যাসিবাদী নিষ্ঠুর আচরণের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি।
‘এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করতে গিয়েও বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরকে সরকারের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে। ২০২১ থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা এবং গ্রেপ্তারের জোরালো হিড়িক শুরু হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব এডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীকে গত ২৮ মার্চ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।
‘গত ১৩ এপ্রিল পুরনো একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তার কারাবাস অন্যায়ভাবে দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। আবারও তাকে নতুন মামলা মিথ্যা মামলা দিয়ে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরীকে গত ৫ বছর যাবৎ মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় গ্রেপ্তার করে কারান্তরীণ রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, আসলাম চৌধুরী যখনই আদালত থেকে জামিন লাভ করেন তখনই নতুন নতুন পুরনো বানোয়াট মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তার কারাবাস দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে।
‘এছাড়া চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জয়পুরহাট, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরকে প্রতিদিনই গ্রেপ্তার, কারান্তরীণ করা হচ্ছে এবং এই প্রক্রিয়া চলমান রাখা হয়েছে। গত ২৬ মার্চ ২০২১ থেকে এ পর্যন্ত বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় ২০০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, করোনাভাইরাসের এই ক্রান্তিকালে দেশের মানুষের ভাল-মন্দ তোয়াক্কা না করে কেবলমাত্র নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতেই সরকার বিএনপিসহ বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম চালানোকে দৈনন্দিন কর্মসূচিতে পরিণত করেছে।
‘লকডাউনের এই সুযোগে সরকার যেন ক্র্যাক ডাউন চালাচ্ছে। ভয়াবহ লকডাউনের মধ্যেও গ্রাম-শহর, পাড়া-মহল্লায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালাচ্ছে। সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কেউ যাতে মুখ খুলতে না পারে সেজন্যই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালানোকে লক্ষ্য হিসেবে ধরে নিয়েছে সরকার। নির্যাতন-নিপীড়ন, গুম-খুন ইত্যাদি অপকর্মের মাধ্যমে দেশকে এক ভয়াবহ অরাজকতার দিকে ঠেলে দিয়েছে তারা। এর মাধ্যমে দেশকে তারা কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা ও কাল্পনিক কাহিনী তৈরি করে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই সরকারের নিষ্ঠুর থাবা থেকে অন্য বিরোধী দল ও মতের মানুষরাও রেহাই পাচ্ছেন না।
‘বর্তমান সরকার পরিকল্পিতভাবে নিজেদের সৃষ্ট অনাচার এবং করোনার মহামারির অভিঘাতে তাদের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্যই বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম চালাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
‘দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, এই সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাই দেশের ভয়াবহ সংকটে বা জনগণের দুর্দশা লাঘবে তাদের কোন উদ্যোগ নাই। তারা নিজেদের অনৈতিক শাসন টিকিয়ে রেখে দীর্ঘকাল ক্ষমতা ভোগ করতেই দমন-নিপীড়ণের স্টিম রোলার অব্যাহত রেখেছে।’
হেফাজতে ইসলাম বা তাদের কোন কর্মসূচির সঙ্গে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হেফাজত সংশ্লিষ্ট মামলাতেও বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নাম জড়িয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি অবিলম্বে নিপুণ রায় চৌধুরী, লায়ন আসলাম চৌধুরীসহ দেশব্যাপী গ্রেপ্তার করা বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।