কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ৪৪ নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এসব ব্যক্তির ব্যাংকিং লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
বিষয়টি মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন বিএফআইইউ-এর এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘বুধবার তাদের হিসাবের বিষয়ে তলব করা হয়।’
গত বুধবার সব ব্যাংকে এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছিল বিএফআইইউ। ৪৪ নেতার সবাই সংগঠনটির আগের কমিটিতে ছিলেন।
চিঠিতে এসব ব্যক্তি ও তাদের স্বার্থ-সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে অতীতে বা বর্তমানে কোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট পরিচালিত হলে যাবতীয় তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি এবং শুরু থেকে হালনাগাদ লেনদেন বিবরণীসহ যাবতীয় তথ্য পাঠাতে হবে।
যাদের ব্যাংক হিসাব চাওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় ওলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি খলিলুর রহমান মাদানী, হেফাজতে ইসলামের আগের কমিটির সহসভাপতি ড. আহমেদ আব্দুল কাদের, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহিনুর পাশা চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামবাদী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল ইসলাম জিলানী, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাওলানা হারুন ইজহার, তার ছেলে মাওলানা মুসা বিন ইসহাক, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা নাসির উদ্দিন মনির, সহকারী মহাসচিব ফজলুল করিম কাসেমি ও মাওলানা হাসান জামিল, সহ-অর্থ সম্পাদক আহসান উল্লাহ মাস্টার, সহকারী আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাওলানা শোয়াইব আহম্মেদ, সহকারী প্রচার সম্পাদক গাজী ইয়াকুব ওসমানী, মাওলানা কামরুল ইসলাম কাসেমী ও ইনামুল হাসান ফারুকী এবং সদস্য মাওলানা মুফতি কেফায়েত উল্লাহ।
আরও তথ্য চাওয়া হয়েছে ঢাকা মহানগরের আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আজহারুল ইসলাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন ও মাওলানা মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, অর্থ-সম্পাদক মাওলানা মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, সহকারী অর্থ সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, সহকারী মহাসচিব মুফতি আজহারুল ইসলাম, সহকারী প্রচার সম্পাদক মাওলানা এহসানুল হক ও সদস্য মাওলানা নুর হোসাইন নুরানী।
এ ছাড়া মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নাতি মাওলানা আশরাফ মাহাদী, আগের কমিটির ফরিদপুর জেলা সভাপতি মাওলানা শাহ আকরাম আলী, সাধারণ সম্পাদক মাওলনা মুফতি কামরুজ্জামান, কওমি প্রজন্মের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আহ্বায়ক মাওলানা এরশাদ উল্লাহ কাশেমী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইউনুছিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী ও শিক্ষক মাওলানা মুহাসিনুল করিম, মুন্সিগঞ্জের জামিয়া ইসলামিয়া হালিমিয়া মধুপুর মাদ্রাসার শিক্ষক আবু আম্মার আব্দুল্লাহ ও নায়েবে মুহতামিম ওবায়দুল্লাহ কাসেমী, কিশোরগঞ্জের দারুল উলুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ জামী, হাটহাজারী উপজেলার আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া নোমান কাসেমী, হাটহাজারী পৌর হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল্লাহ আসাদ, সক্রিয় সমর্থক আহাম্মেদ আলী কাশেমী, মাওলানা মো. মোহসিন মিয়া, মাওলানা জুনাইদ কাসেমী, মাহমুদুল হাসান গুনবী, আলী হাসান উসামা ও মাওলানা জয়নাল আবেদীন বাকাইলীর ব্যাংক হিসাবের তথ্যও চাওয়া হয়েছে।
এর আগে ৩১ মার্চ হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ২৪ নেতা এবং ৩০টি মাদ্রাসার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলব করে বিএফআইইউ।
গত রোববার হেফাজতের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে নানা ইস্যুতে আলোচনা-সমালোচনায় রয়েছে হেফাজতে ইসলাম। সবশেষ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর উপলক্ষে দেশব্যাপী তাণ্ডব চালায় সংগঠনটি।
মোদির বাংলাদেশে আগমনের দিন ২৬ মার্চ জুমার নামাজ শেষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ মিছিলে তাণ্ডব চালান হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। তাণ্ডব চালানো হয় চট্টগ্রামের হাটহাজারি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। পরদিন দেশজুড়ে হরতাল ডাকে সংগঠনটি। সহিংসতা হয় এদিনও। কিছু কিছু জায়গায় সহিংতা চলে এর পরের দিনও।
উত্তালের ওই তিন দিনে শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই নিহত হন ১১ জন। চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে নিহত হয় অন্তত চারজন। অভিযোগ উঠেছে, বিক্ষোভ, হরতাল, মিছিলে সরকারি অফিস, দপ্তর, মুক্তিযুদ্ধ স্থাপনায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছেন হেফাজতের কর্মীরা।
এর মধ্যে এক নারীসহ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে একটি রিসোর্টে স্থানীয়দের হাতে অবরুদ্ধ হন হেফাজত নেতা মামুনুল হক। পরে ওই এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে ছিনিয়ে নেন মামুনুলকে।
এসব প্রেক্ষাপটের মধ্যেই ৩১ মার্চ সংগঠনটির শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্ন জেলায় হেফাজতের ৫৪ নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার আরও ৪৪ নেতার ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হলো।