সময়মতোই করোনার টিকা সংগ্রহ করা যাবে বলে অভয় দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মঙ্গলবার সকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির আয়োজনে স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় কাদের বলেন, ‘ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে করোনা টিকা দিতে পারছে না। তারপরও অন্যান্য সোর্স থেকে সংগ্রহ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর চেষ্টার কোনো কমতি নেই।
‘ইনশা আল্লাহ অন্যান্য দেশ থেকে সময়মতো টিকা সংগ্রহ করতে পারব। সে ব্যাপারে সরকার সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। টিকার সংকট নিয়ে বিরোধী দল যেটা বলে আসছে, সেটা এখানে সৃষ্টি হবে না।’
দেশের করোনা পরিস্থিতির বর্তমান চিত্র তুলে ধরে কাদের বলেন, ‘রাজশাহীতে করোনা পরিস্থিতি খারাপ রূপ নিয়েছে। সেখানে হাসপাতালে অক্সিজেন এবং বেডের কিছুটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সরকার সেটা সরবরাহ করছে। এখনও ভারতে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, সেই অবস্থা আমাদের এখানে সৃষ্টি হয়নি।
‘কারণ প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। তিনি ঝড়ের সময়ও যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। করোনা আরও ভয়ংকর রূপ নিতে পারে, এটা তার মাথায় আছে। এ জন্য তিনি সব বিষয়ে যথাযথ নজর রাখছেন এবং ব্যবস্থা নিচ্ছেন। যেসব জায়গায় সংক্রমণ বেশি, সেখানে আঞ্চলিক লকডাউন দিচ্ছেন।’
করোনা সংক্রমণ রুখতে দেশবাসীকে সচেতন হওয়ার তাগিদও দেন ক্ষমতাসীন দলের এ নেতা।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউ মোকাবিলার পর এখন দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় আমরা ভালো অবস্থানে রয়েছি। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের সীমান্ত এলাকাগুলোতে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে, প্রাণহানি বাড়ছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি স্থিতিশীল এই কথা বলা যায় না।
‘সংক্রমণ কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। মৃত্যু ৩০, ৩৫ বা ৪০-এর কোঠায় আছে, তাও বলা যায় না। করোনাভাইরাস আমাদের নিয়ন্ত্রণেই চলে এসেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বৃদ্ধি পায়। আসলে করোনা আনপ্রেডিকটেবল। কখন যে কোন দিকে মোড় নেবে বলা মুশকিল। কাজেই আমাদের সব সময়ই সতর্ক থাকতে হবে।’
‘নির্বাচন বয়কট করে ষড়যন্ত্রের পথে বিএনপি’
নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি আবারও আগুন-সন্ত্রাসের পথে হাঁটছে বলে আশঙ্কার কথা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব এখন আবার নতুন করে আন্দোলনের হাঁকডাক শুরু করেছেন। এখন আন্দোলনটা কোন বছর হবে? দেখতে দেখতে ১২ বছর, আন্দোলন হবে কোন বছর?
‘একবার বলে এসএসসি পরীক্ষা, আবার বলে এইচএসসি পরীক্ষার পরে। আবার বলে রোজার ঈদের পরে কিংবা কোরবানির ঈদের পরে। কত ঈদ ও পরীক্ষা চলে গেল কিন্তু বিএনপির আন্দোলন তো চোখে পড়েনি।’
তিনি বলেন, ‘এখন আবার বলে গণ-অভ্যুত্থান করবে, এই দেশে ’৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল, পরে গণ-আন্দোলন হয়েছে। তারা ’৬৯-এর পর আবার গণ-অভ্যুত্থান দেখাবে, ১২ বছর ধরে দেখাচ্ছে। কখন দেখব আল্লাহ মাবুদ জানে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি উপনির্বাচন বয়কট করে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। তারা আবারও আগুন-সন্ত্রাসের পথে হাঁটছে। আন্দোলনের নামে সহিংস কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলে আওয়ামী লীগ রাজপথে সমুচিত জবাব দেবে।’
বিএনপি সবকিছুতেই সরকারের দোষ খুঁজছে বলেও মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমি মাঝেমাঝে ভাবি বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। তারা আবার নাকি বলে যে আওয়ামী লীগই দায়ী। কখন আবার বজ্রপাতে মৃত্যুর জন্য শেখ হাসিনার সরকারকে দায়ী করে। সেটাই আমি ভাবছি। এটাও তারা করবে।
‘ঘূর্ণিঝড় আসার সময় বলেছিল, সরকারের জন্য ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল। বস্তিতে আগুন লেগেছে, সেটার জন্যও আওয়ামী লীগকে দায়ী করে। আমরা আগুন লাগিয়ে মানুষের দুর্ভোগের সৃষ্টি কেন করব? আগুন-সন্ত্রাস তো তাদের ব্যাপার।’
‘ফিলিস্তিনের পাশে, দেশের মানুষের পাশে কেন নেই’
বিএনপি যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনে ওষুধ পাঠালেও করোনা আক্রান্তদের পাশে কেন নেই, তা জানতে চেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘বিএনপি ফিলিস্তিনে ওষুধ পাঠিয়েছে বলে আমরা শুনেছি। তাদের তো কতগুলো ওষুধ কোম্পানি রয়েছে। তারা অভাবে আছে তা তো না।
‘খুবই বড় বড় ওষুধ কোম্পানি আছে। তারা তো এই সময়ে করোনা চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করতে পারেন।’
এ সময় করোনাভাইরাসের সুরক্ষাসামগ্রী নিয়ে বিএনপিকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানান কাদের। বলেন, ‘করোনাভাইরাসের বিষয়ে সরকারের সচেতনতা এবং সতর্কতা নিয়ে যারা প্রশ্ন করেন, তারা বিরোধিতার খাতিরেই বিরোধিতা করেন। বাজেটও বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
‘এই প্রণোদনা প্যাকেজগুলো দেয়া হলো। এই টাকা কোথায় থেকে আসছে? এটা কি বিরোধী দল দিচ্ছে? এটা তো সরকারি কোষাগার থেকে জনগণকে দিচ্ছে সরকারই।’
কাদের বলেন, ‘আমরা প্রথম ঢেউ অতিক্রম করেছি, দ্বিতীয় ঢেউও অতিক্রম করতে চলেছি। জীবন ও জীবিকার সমন্বয় করে সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। এতে একজন মানুষও অনাহারে মারা গেছেন বলে আমাদের জানা নেই। সরকার অন্যান্য দেশের তুলনায় সফলভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে।
‘এটা বিএনপিকে আর কতটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে। তারা দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না। তারা কানে লাগিয়েছে তুলা। কিছুই শুনতে পায় না। তাদের চোখে ঠুলি। চোখেও দেখতে পায় না। ভালো কিছু তাদের চোখে পড়ে না। শুধু সমালোচনার জন্য দিনরাত বিষোদগার করছে।’