সীমন্তবর্তী জেলাগুলোতে দ্রুত বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ। বেশ কিছু এলাকায় স্থানীয়ভাবে লকডাউন ঘোষণা করা হলেও জোরেশোরেই ভোটের আয়োজন করছে নির্বাচন কমিশন- ইসি।
করোনা সংক্রমণের মধ্যে ইসি ভোটের আয়োজন করলেও তাতে আপত্তি নেই জাতীয় পার্টির, দলটির আপত্তি ১৪ জুলাইয়ের নির্বাচনকে ঘিরে। কারণ, সে দিন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী।
দলের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যানের দ্বিতীয় বার্ষিকীতে ভোট আয়োজনে আপত্তি জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে জাপা।
আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সিইসি কেএম নূরুল হুদার সঙ্গে দেখা করে দলের মহাসচিব জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলুর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল স্মারকলিপি দেয়।
এ সময় জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের কো-চেয়ারম্যান আবু হোসেন বাবলাসহ আরও কয়েকজন।
সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে বাবলু বলেন, ‘আগামী ১৪ জুলাই আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। সে দিন তিনটি জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
‘কিন্তু জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে ঢাকাসহ সারা দেশে। সে দিন আমাদের নেতা-কর্মীরা নির্বাচন করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবে না। তাই আমাদের দলের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই এ তিনটি উপনির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী, তবে ১৪ জুলাই নির্বাচন হলে আমাদের কর্মীরা মনে কষ্ট পাবে।’
সিইসিসহ অন্যারা জাতীয় পার্টির অনুরোধ শুনেছেন। ইসি তারিখটি আগে খেয়াল করেনি বলেও জানায়।
ইসি তাদের পক্ষে যা করা সম্ভব করার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানান বাবলু।
তিনি বলেন, ‘সিইসি বলেছেন, আমি একা কিছু করতে পারবে না। পুরো কমিশন বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা বসে আপনাদের পরে এ বিষয়ে জানাব।’
১৪ তারিখেই যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে আপনারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কি না জানতে চাইলে বাবলু সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা এখনই বলতে পারছি না। এ বিষয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।’
করোনা সংক্রমণের সময় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে এক প্রশ্নে জবাবে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘যেহেতু সরকারের হাতে ক্ষমতা। সরকারই এগুলো আমাদের থেকে ভালো জানে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি যাতে পালন হয় সরকার নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।
‘আসলে নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। নির্বাচনগুলোর জন্য অনেকবেশি দেরি হয়ে গেছে। ৯০ দিনের মধ্যে করার কথা ছিল। কিন্তু যারাই নির্বাচন করবে তারা অবশ্যই সবাইকে করোনার যে স্বাস্থ্যবিধি আছে তা মেনেই করতে হবে।’
নিজেদের অবস্থায় জানিয়ে সিইসির কাছে দেয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, ২০২০ সালের ১৪ জুলাই বগুড়া-১ ও যশোর-৬ উপনির্বাচন দিয়েছিল কমিশন। তখন বরা হয়েছিল কমিশন তারিখ খেয়াল করেনি। যেটা আবারও পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। এতে জাতয়ি পার্টির নেতা-কর্মীরা খুব কষ্ট পেয়েছেন। সে দিন পার্টি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো নানা আয়োজন করে।
এরশাদ শুধু ব্যক্তি হিসেবে না দেখে তাকে প্রতিষ্ঠান আখ্যা দিয়ে জাতীয় পার্টি জানায়, তিনি সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি, সেনাবাহিনীর প্রধান, সংসদে বিরোধীদলের নেতা ও একটা সময় দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু উনার মৃত্যুবার্ষিকীতে নির্বাচন কমিশনের এমন ভোট আয়োজন খুব দুঃখজনক।
ইসির ঘোষণা করা তফসিল অনুযায়ী, ২১ জুন ৩৭১টি ইউপি, ১১ পৌর, লক্ষ্মীপুর-২ আসন এবং ১৪ জুলাই ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫ ও সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।