হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেয়া পদ প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ মাদানী।
সোমবার নতুন এ কমিটি ঘোষণার পরই হাতে লেখা এক চিঠিতে ওই পদ প্রত্যাখ্যানের এমন ঘোষণা দেন তিনি।
নতুন কমিটিতে সহকারী মহাসচিবের পদ দেয়া হয়েছিল ইউসুফ মাদানীকে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে হাটহাজারী মাদ্রাসায় হাঙ্গামার পর আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর নভেম্বরে যে সম্মেলন হয়, তাতে শফীর অনুসারী সবাইকে বাদ দেয়া হয়। এমনকি সম্মেলনে কাউকে আমন্ত্রণও জানানো হয়নি।
গত মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রতিবাদে নেমে সহিংসতায় জড়ানো হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয়া হয় ২৫ এপ্রিল।
ওই রাতেই গঠন করা হয় আহ্বায়ক কমিটি। আর এর দেড় মাস পর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
হেফাজতের নতুন কমিটি ঘোষণা করতে মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদীর সংবাদ সম্মেলন
নতুন এই কমিটিতে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক কোনো নেতাকে রাখা হয়নি। আর চমক ছিল আল্লামা শফীর বড় ছেলে ইউসুফ মাদানীর অন্তর্ভুক্তি।
ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে এই কমিটি ঘোষণা করেন মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী। তবে সেখানে ছিলেন না ইউসুফ মাদানী।
তবে পরে তিনি হাতে লেখা একটি বিবৃতি পাঠান গণমাধ্যমে।
হেফাজতের নতুন কমিটিকে ‘তথাকথিত’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমার নাম দেখে আমি মর্মাহত। অতএব যে বা যাহারা আমার পিতাকে কষ্ট দিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় দিয়েছেন তাদের সঙ্গে আমি কখনও এক হতে পারি না।’
- আরও পড়ুন: আল্লামা শফীকে কি মেরে ফেলা হয়েছে
গত সেপ্টেম্বরে হাটহাজারী মাদ্রাসায় যখন হাঙ্গামা হয়, সে সময় আল্লামা শফীর কক্ষেও ভাঙচুর করা হয়। তাকে নানা হুমকিধমকি দেয়ার অভিযোগ করছেন স্বজনরা। পরে চিকিৎসায় বাধা দেয়া এমনকি অক্সিজেনের নল ছিঁড়ে ফেলা ও অ্যাম্বুলেন্সে উঠতে বাধা দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
আল্লামা শফীর শ্যালক মাঈন উদ্দীন এই ঘটনায় হেফাজতের বাবুনগরীপন্থিদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলাও করেন গত ডিসেম্বরে। সে মামলায় এরই মধ্যে ৪৩ জনকে আসামি করে প্রতিবেদন দিয়েছে তদন্ত সংস্থা পিবিআই।
হেফাজতের নতুন কমিটিতে পদ প্রত্যাখ্যান করে আল্লামা শফীর ছেলে ইউসুফ মাদানীর লিখিত বিবৃতি
শফীপুত্র বলেন, ‘আজকের ঘোষিত তথাকথিত হেফাজতের কমিটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’
হাটহাজারী মাদ্রাসায় হাঙ্গামার সময় হামলাকারীদের আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্য ছিলেন ইউসুফ মাদানীর ছোট ভাই আনাস মাদানী। তিনি সে সময় হেফাজতের প্রচার বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। সেই পদের পাশাপাশি তাকে মাদ্রাসার দায়িত্ব থেকেও সরিয়ে দেয়া হয়। এমনকি আল্লামা শফীর জানাজাতেও তাকে যেতে দেয়া হয়নি। সে জানাজায় ছিলেন ইউসুফ মাদানী।
ইউসুফ মাদানীর এই অবস্থানের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনেই প্রশ্নের মুখে পড়েন হেফাজতের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী।
জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে তার যে কথা হয়েছে, তিনি কমিটিতে থাকার কথা জানিয়েছেন। তিনি কমিটি মানেন না বলে যদি কোনো কথা বলে থাকেন, সেটা সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন। আমাদেরকে এই রকম কিছু বলেন নাই।’