স্বাধীনতাযুদ্ধে নিহত ৩০ লাখ শহীদের বেশির ভাগই ভারতের শরণার্থী শিবিরে মারা গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম হলে ‘সুশাসনে গণতন্ত্রের বিকল্প নেই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের ৩০ লাখ লোক কোথায় মারা গেছে? বেশির ভাগই ভারতে মারা গেছে রিফিউজি ক্যাম্পে। সেখানে ঠিক কতজন মারা গেছে, আজ পর্যন্ত তারা (ভারত) সে তালিকা আমাদের দেয়নি।
‘ভারত নাকি আমাদের বন্ধু। এটাই কি বন্ধুর নমুনা? যেখানে আমার নিখোঁজ ভাইয়ের নাম পাই না। যদি জানতাম তাহলে জাতিকে বলতে পারতাম আমার ভাই, আমার বোন, আমার বাবা এই জাতির জন্য আত্মত্যাগ করেছেন। আজকে ভারত প্রতিটা পদে পদে আমাদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।’
তিনি বলেন, ‘জালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। জালিমদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। সবাই বলে ভারতের সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক রয়েছে। মশার সঙ্গেও তো আমাদের রক্তের সম্পর্ক রয়েছে। ভারত স্বাধীনতাযুদ্ধে আমাদের সহযোগিতা করেছে, এ জন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু স্বাধীনতার প্রথম বছরে তারা আমাদের জন্য যা খরচ করে এসব তুলে নিয়েছে।’
গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি আরও বলেন, দেশে আজকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা মানেই এক দিনের ভোট না। গণতন্ত্রই হচ্ছে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। বাংলাদেশে সুশাসন আজ কবরে।
‘নারীরা রাস্তায় বেরিয়ে না এলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না। সবাইকে মেয়েদের সমান চোখে দেখতে হবে। নারীদের যদি আপনার সমান চোখে না দেখেন তাহলে বাংলাদেশে কখনও গণতন্ত্র আসবে না। সবাইকে জিনিসটা মাথায় রাখতে হবে, আমাদের ছেলেরা যে সুবিধাটা পাবে, আমাদের মেয়ে ঠিক তেমন সুবিধা পাবেন। একজন নারী তো আমাদের শাসন করছেন। আর একজন নারী তো জেলেও গেছেন।’
বঙ্গবন্ধু এ দেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের প্রাণের মানুষ। তবে তিনিও অনেক ভুল করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনের বড় ভুল যে তিনি গণতন্ত্রকে করব দিয়েছেন। তিনি গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছেন, এর জন্য বছরের পর বছর জেল খেটেছেন। সারা দেশের মানুষকে জাগ্রত করেছেন।
‘কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভারতীয়দের প্ররোচণায় ওনার শখ হয়েছিল আজীবনের জন্য প্রেসিডেন্ট হওয়ার। যেটা গণতন্ত্র হত্যার শামিল। যারা আজকে হাসিনাকে তাল দিচ্ছে, দেশজননী বানাচ্ছে, কওমি জননী বানাচ্ছে, তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন।’
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘গতকাল ঢাকার আদালতে ৫৪ জন ছাত্রের জামিন আপিল আবেদনের সময়সূচি ছিল। কিন্তু কোমর ভাঙা জজ সাহেব তাদের জামিন দেননি। এই জজ সাহেবের বিচার রাস্তার মাঝখানে এনে করতে হবে। লোকজন ন্যাংটা করে তাদের গায়ে থুথু দেবে।
‘সাংবাদিক রোজিনা এক দিনের মধ্যে জামিন পেতেন। কিস্তু জামিন দেরি করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওহি পাঠান আইনমন্ত্রীর কাছে। তার জামিন পেতে এক সপ্তাহ লাগল কেন, সেটার জবাব দিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক ধর্মমন্ত্রী নাজিম আল আজাদ। এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মনজুরুল হক সিকদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান লিটন, মো. আব্দুল কাদের, নাজমা আক্তারসহ আরও অনেকে।