বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ‘একসেপ্ট ইসরায়েল’ শব্দ দুটি বাদ দেয়া কার্যত ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়া বলে মন্তব্য করেছেন চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম।
রোববার রাজধানীর পল্টনের দলীয় কার্য়ালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে চরমোনাই পীর বলেন, ‘বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ৫০ বছরের ঐতিহ্য ছুঁড়ে ফেলে “একসেপ্ট ইসরাইল” শব্দটা বাদ দেয়া হয়েছে। এই সংবাদে আমরা বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ।
‘তাইওয়ানকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়া সত্ত্বেও “একসেপ্ট তাইওয়ান” শব্দ পাসপোর্টে উল্লেখ না থাকার কারণে তৃতীয় কোনো দেশ থেকে তাইওয়ানের ভিসা নেয়া যায় এবং তাইওয়ানের সঙ্গে লেনদেন করা যায়।’
অবিলম্বে পাসপোর্টে “একসেপ্ট ইসরাইল’’ শব্দ দুটি যোগ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যে পাসপোর্টগুলো এই শব্দ ছাড়া ইস্যু করা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করে নিতে হবে। একই সঙ্গে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে কারা এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তা বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’’
আলেমদের মুক্তি চান চরমোনাই পাীর
সংবাদ সম্মেলনে চরমোনাই পীর সব আলেমদের মুক্তি চেয়ে বলেন, ‘এখানে আমরা ওলামায়ে কেরামদের ওপরে যে আচরণ করা হচ্ছে, কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই গ্রেপ্তার হয়রানি করা হচ্ছে তাকে আমরা ব্রিটিশ আমলে ইংরেজদের আচরনের সঙ্গে তুলনা করছি।
মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তি চান কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এখানে মামুনুল হক ব্যক্তি এক বিষয়। যারা কোন অপরাধে জড়িত নয় তাদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। এখানে শুধু মামুনুল হকের একার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তো হবে না। সমস্ত ওলামায়ে কেরামের বিষয়ে আমরা বলছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ২৮ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা তাদের মুক্তি চাই।’
নারায়ণগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় যারা তাণ্ডবে যুক্ত ছিলেন তাদের মুক্তি চান কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘যারা অপরাধী আমরা তাদের শাস্তির বিষয়ে বলেছি। কিন্তু যারা নিরপরাধী তাদের মুক্তি চাচ্ছি।’
যেমন বাজেট চায় পীরের দল
অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশের আগে বাজেট নিয়ে বেশ কিছু দাবি সরকারের কাছে উত্থাপন করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে কল্পনা বিলাস বাদ দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের পরিমাপ করে সে অনুযায়ী বরাদ্দ দিতে হবে। ঋণ ও অনুদান নির্ভর বাজেট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শিক্ষা ও জনসম্পদ উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। সরকারি বেতনভাতা এবং প্রতিরক্ষা ক্ষাতে ব্যয় কমাতে হবে।
টিকা সংগ্রহ ও বিতরণে জাতীয় কমিটির দাবি
বাংলাদেশে টিকা প্রাপ্তি ও বিতরণ প্রক্রিয়া ভুল সিদ্ধান্ত, অদক্ষতা ও নৈরাজ্যের কবলে পড়ে অনিশ্চিত হয়ে আছে বলে মনে করেন চরমোনাই পীর। তিনি বলেন, টিকা প্রান্তিতে ভারতের বিশ্বাসঘাতকতার পরও টনক নড়েনি সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সরকার রাশিয়া ও চীনের থেকে টিকা সংগ্রহ করা নিয়েও টালবাহানা করেছে। টিকা সংগ্রহ ও বিতরণে জাতীয় কমিটি গঠনের দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ারও দাবি জানান চরমোনাই পীর। তিনি বলেন, ‘সবারই প্রত্যাশা স্বাস্থ্য সতর্কতা নিশ্চিত করে দেশের সবরকম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হোক। দেশের প্রায় ৪ কোটি ছাত্র-ছাত্রীর স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল হক আজাদ প্রমুখ।