বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জীবন পাল্টে যাচ্ছে রিকশা চালানো ছাত্রলীগের ফারুকের

  •    
  • ২৯ মে, ২০২১ ২১:০৪

গত ২৬ মে নিউজবাংলায় প্রকাশ হয় ‘দাপুটে ছাত্রলীগ নেতা ফারুক এখন রিকশাচালক’ শিরোনামে প্রতিবেদন। এরপর তার পাশে দাঁড়াতে শুরু করেন বহুজন। আর্থিক সাহায্য সহযোগিতার পাশাপাশি চাকরি দিয়ে সংকটের সমাধানের পথ খুলল তার। গাজীপুর সিটি করপোরেশনে তার চাকরির ব্যবস্থা হচ্ছে।

রিকশা চালিয়ে সংসার চালানো সাবেক ছাত্রলীগ ও বর্তমানে যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন ফারুকের দুর্দশার অবসান হতে চলেছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনে তার চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে।

ক্ষমতার বাইরে থাকার সময় ‘জয়বাংলা’র পক্ষে গলা ফাটানো এই নেতা দলের সুসময়ে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতে বাধ্য হচ্ছিলেন।

গত ২৬ মে নিউজবাংলায় প্রকাশ হয় দাপুটে ছাত্রলীগ নেতা ফারুক এখন রিকশাচালক শিরোনামে প্রতিবেদন। এরপর তার পাশে দাঁড়াতে শুরু করেন বহুজন।

ছাত্র জীবনে তিনি ছিলেন নোয়াখালীর কবিরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। পরে তিনি এলাকায় যুবলীগের দায়িত্ব পান।

তবে নানা কারণে পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি। আর আয়ের সুযোগও সীমিত হয়ে উঠার পর অর্থাভাবে এক পর্যায়ে রিকশা নিয়ে যাত্রী টানা শুরু করেন।

এলাকায় রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে পরিচিতি আছে ফারুকে। এ কারণে স্থানীয়রা তার রিকশায় চড়তেও লজ্জা পান।

পাশে দাঁড়ালেন শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের

তার জীবনের এই কাহিনি শোনার পর পাশে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার দুপুরে সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতাকে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উপহার দিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান সেই রিকশাটি হস্তান্তর করেন। বলেন, ‘তার পারিবারিক সমস্যাগুলো খতিয়ে দেখে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে।’

একই দিন বিকেলে ফারুকের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেন নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। তখনই তিনি ফারুকের চাকরির ব্যবস্থা করার ঘোষণাটি দেন।

একরামুল বলেন, ‘ফারুকের এই সংবাদ প্রকাশের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাকে একটা সাহায্য দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের ভাই গাজীপুর সিটি করপোরেশনে একটা চাকরি দেয়ার জন্য মেয়র জাহাঙ্গীর সাহেবকে নিদের্শনা দিয়েছেন এবং সেখানে এটা নিশ্চিত করা হয়েছে।’

ফারুকের হাতে অর্থ তুলে দিচ্ছেন নোয়াখালী সদর আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী

ফারুককে দুঃসময়ের নেতা উল্লেখ করে সংসদ সদস্য বলেন, ‘তিনি যে এতটা সমস্যাগ্রস্ত ছিলেন, এটা দলীয় কোনো ফোরামে জানা যায়নি।’

নোয়াখালীর ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা দলীয় কোন নেতাকর্মী এ ধরনের কোন সমস্যায় পড়লে তার সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ করার পরামর্শও দেন সাংসদ একরাম।

পাশে দাঁড়াচ্ছেন কাদের মির্জাও

ফারুকের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন নোয়াখালী বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জাও। রোববার সকাল ১১টায় তার কাছে যাওয়ার কথা আছে ফারুকের।

কাদের মির্জা বলেন, ‘ফারুকদের মতো কর্মীরা আওয়ামী লীগের প্রাণ। তাদের শ্রমে-ঘামে আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। অথচ ফারুকের মতো কর্মীরা অবহেলিত।’

এগিয়ে এসেছেন অন্যরাও

সব দিক বিবেচনায় করলে ফারুকের এখন সুসময়ই বলা যায়। প্রধানমন্ত্রী, সড়ক মন্ত্রী, তার ভাইয়ের পাশাপাশি এখন সহযোগিতায় এগিয়ে আসছেন অন্যরাও।

সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন, গোলাম রাব্বানী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলে শেখ ফজলে নাঈম, নোয়াখালী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিহাব উদ্দিন শাহীনও।

যা বলছেন ফারুক

আনোয়ার হোসেন ফারুক বলেন, ‘নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমে সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলীয় নেতারা খোঁজখবর নিচ্ছেন। অনেকেই সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।‘

ফারুকের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পাঠানো উপহার

ফারুক বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসক একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা উপহার দিয়েছেন। আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের সাহেবের নির্দেশে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে একটি চাকরির খবর শুনেছি। এমপি একরামুল করিম চৌধুরীও আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।’

‘দোয়া করবেন সবার সহযোগিতায় যেন পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচতে পারি’- বলেন এই রাজনৈতিক কর্মী।

সেই প্রতিবেদন ফিরে দেখা

ফারুক কবিরহাট উপজেলার পদুয়া গ্রামের মোহাম্মদ উল্যার ছেলে। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।

মা, স্ত্রী ও চার কন্যাসন্তান নিয়ে বড় একটি সংসারের দায়িত্ব এখন ফারুকের কাঁধে।

২০০১ সালে বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের কার্যক্রম যখন নিভু নিভু অবস্থায়, তখন দাপটের সঙ্গে কবিরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে সংগঠন গুছিয়ে তোলেন তিনি। সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয় থাকায় জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

ফারুক জানান, ১৯৯৫ সালে আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে, তখন তিনি ছাত্রলীগে যোগ দেন। ওই বছরই কবিরহাট পদুয়া শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

২০০১ সালে কবিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি, ২০০৩ সালে বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে কবিরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

তখনকার সময়ে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করতে গিয়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের রোষানলে পড়তে হয়। যার কারণে ডিগ্রি পরীক্ষাটাও দেয়া হয়নি তার।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ডিসি অফিসে চতুর্থ শ্রেণির চাকরির জন্য চেষ্টা করেন, কিন্তু পাননি। ছোট ভাইটাকেও চাকরি নিয়ে দিতে পারেননি

নিজের স্ত্রীর জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে নেতাদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন। কিন্তু ঘুষ দিতে পারেননি বলে চাকরি হয়নি।

এ বিভাগের আরো খবর