খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির নির্লিপ্ততায় চটেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সরকার বিএনপিকে এলএসডি খাইয়ে বিভ্রম করে রেখেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে শনিবার তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত ‘রাজনৈতিক সংকট: উত্তরণ কোন পথে’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেন জাফরুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া এত দিন জেলে, অথচ বিএনপির কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয় সরকার তাদের এলএসডি খাইয়ে দিয়েছে।’
ভয়ংকর মাদক এলএসডি, যার পুরো নাম লাইসারজিক অ্যাসিড ডাইথেলামাইড। এলএসডি মাদক মানুষের মধ্যে বিভ্রম (হেলুসিনেশন) তৈরি করে। এটা সেবন করার পর মস্তিষ্কে হেলুসিনোজেনিক অ্যাফেক্ট তৈরি হয়, যা ব্যক্তির ব্যবহার ও চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বিশেষ করে এটা গ্রহণের পর সাধারণভাবে যে ধরনের রং প্রকৃতিতে দেখা যায়, তার থেকেও বেশি রং দেখতে পাওয়া যায়।
বিএনপিকে সরকার এভাবে নেশাগ্রস্ত করে রেখেছে কি না, এমন প্রশ্ন তুলেছেন জাফরুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের জন্য ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। একজন মৃত ব্যক্তির জন্য ১৫ দিনের কর্মসূচি করছেন আর জীবিত খালেদা জিয়ার অবস্থা খুব খারাপ। ওনার যেসব লক্ষণ দেখছি আগামী নির্বাচন পাবেন কি না, যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমরা দোয়া করি যেন উনি বেঁচে থাকেন।
‘বিএনপিকে প্রমাণ করতে হবে তারা এলএসডি খায় নাই। তা না হলে তারা আত্মহত্যা করছে। তাদের চিন্তার এত দীনতা, এত লোক আছে তাদের, তারা যেভাবে যাচ্ছে, আমরা হয়তো খালেদা জিয়াকে আর বেশি দিন পাব না। আমি গত ৩ বছর ধরে বলে আসছি, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা মুক্ত খোলা বাতাসে হাঁটতে দেয়া। তাহলেই উনি ভালো হবেন। কেবল ওষুধে রোগ ভালো হয় না। ওষুধের সঙ্গে জনগণের ভালোবাসা যখন উনি দেখবেন, উনি তখন সুস্থ হবেন।’
বিএনপি সত্য কথা বলতে ভয় পায় জানিয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘তাদের উচিত ছিল যেদিন থেকে সরকার তাকে (খালেদা জিয়া) বাইরে যেতে দেয়নি, সেদিন থেকে অনশন করা। সেদিনই বলা উচিত ছিল কাশিমপুরে যেতে চাই, ফিরোজাতে থাকতে চাই না। ফিরোজাতে ওনাকে রাখা আরেকটা ধাপ্পাবাজি। উনি কি বধির, কানে শোনেন না? ১৫ দিনের কর্মসূচিতে বিএনপির উচিত মুক্তির জন্য রাস্তায় নামা।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান হলেও দলটিতে খালেদা জিয়ার অবদান বেশি বলে জানান জাফরুল্লাহ। এ জন্য বিএনপির নেতা-কর্মীদের খালেদার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আপনাদের এ পর্যন্ত আসার পেছনে জিয়াউর রহমানের চেয়ে খালেদা জিয়ার অবদান বেশি। জিয়াউর রহমান অকালে প্রয়াণ করেছেন, আপনারা যখন হতাশায় ভুগছিলেন, আপনাদের কোনো পথ ছিল না, এই সাধারণ একজন গৃহবধূ আপনাদের একত্রিত করেছেন। আপনাদের দুবার ক্ষমতায় এনেছেন, এটা তারই অবদান। বিএনপির লোকেরা খালেদা জিয়ার প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে বলে আমি মনে করি। এ জন্য তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।’
বিচার বিভাগেরও সমালোচনা করে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আজকে বিচার বিভাগ সরকারের দালাল, খাদেম, আইনমন্ত্রীর চাকরে পরিণত হয়েছে। কোর্টে এমন একটা চেয়ার সেটা নাড়াচাড়া করা যায় না। দুজন লোক লাগে নাড়াতে। এতেই বোঝা যায় তাদের মস্তিষ্ক কত অথর্ব হয়ে গেছে।’
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের মায়ের মৃত্যু নিয়ে পত্রিকায় জনগণের টাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞাপন দেয়ার সমালোচনা করেন জাফরুল্লাহ। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিচার দাবি করেন তিনি।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, বিএনপির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মো. সেলিম ভূঁইয়া, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনসহ আরও অনেকে।