সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু নিষ্ঠার সঙ্গে অসুস্থ স্ত্রীর সেবা করেছেন বলে জানিয়েছেন দলটির আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী।
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে শনিবার খসরুর স্মরণসভায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা জানান।
স্মরণসভায় মতিন খসরুর জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনসহ অনেকে।
মতিন খসরুর প্রশংসা করে মতিয়া বলেন, ‘পেশার প্রতি নিষ্ঠাবান থেকে কাজ করা, এটা মতিন চৌধুরীর মধ্যে অসাধারণভাবে ছিল। কিন্তু যেটি একটু না বললে নয়, তাহলে তাকে অসম্পূর্ণভাবে চিত্রিত করা হবে।’
মতিন খসরুর প্রথম স্ত্রীর কথা উল্লেখ করে বর্ষীয়ান রাজনীতিক মতিয়া বলেন, ‘তিনি (মতিনের স্ত্রী) কিন্তু চির রুগ্ন ছিলেন। কিন্তু মতিন খসরু যত দিন বেঁচে ছিলেন, স্ত্রীর প্রতি অত্যন্ত নিষ্ঠাভাবে তার যে সেবাযত্ন, স্ত্রীর প্রতি যে কর্তব্য, সেটা পালন করেছেন।’
খসরুর প্রথম বিয়ে প্রেমের ছিল জানিয়ে মতিয়া বলেন, ‘ভদ্রমহিলা অসুস্থ হয়ে ছিলেন দীর্ঘদিন; অনেক অনেক দিন। কিন্তু মতিন খসরু কোনো সময়ে তার এই অসুস্থতার সময়ে অধৈর্য হয়েছেন, এটা দেখতে পাইনি। সব সময় অফিসে বা পার্লামেন্টে তার শেষ কথাটা থাকত, যাই, আপনার ভাবী অসুস্থ বাসায় আছে। যেখানে মেয়েরা বাধ্য হয়ে অসুস্থ স্বামীকে টানে, সেখানে মতিন খসরুর এই দায়িত্ব পালন অনস্বীকার্য।’
সাবেক আইনমন্ত্রীর জুনিয়রদের প্রতি সাহায্যের মানসিকতা ছিল উল্লেখ করে মতিয়া বলেন, ‘তিনি (মতিন) তার জুনিয়র সহকর্মীদের প্রতি হেল্পফুল ছিলেন। তিনি বিরামহীনভাবে পার্টিকে সহযোগিতা দিয়ে গেছেন। তার মধ্যে কর্মী নিয়ে কোনো প্রাইভেসি দেখিনি।
‘২০০১ সালের পরে তার (মতিন) এলাকায় প্রচুর নির্যাতন হয়েছে। কিন্তু তিনি সব সময় তার বাড়ি কর্মীদের জন্য দিয়ে রেখেছেন; যেন একটা লঙ্গরখানা ছিল সেটি।’
শিক্ষামন্ত্রী মতিন খসরুকে স্মরণ করে বলেন, ‘উনি দেশের প্রতি দায়িত্বশীল ছিলেন। আমি যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলাম, তখন উনি দেশের বাইরে থেকে আসলেই আমার সঙ্গে দেখা করে প্রবাসীর সমস্যা নিয়ে কথা বলতেন। কীভাবে আরও ভালোভাবে আমাদের অ্যাম্বাসিগুলো কাজ করতে পারে, সেটা জানাতেন।’
ইনডেমনিটি আইন বাতিল
স্মরণসভায় একাধিক বক্তা বলেন, মতিন খসরুকে মনে রাখার গুরুত্বপূর্ণ কারণ ইনডেমনিটি আইন বাতিলের জন্য তার অবদান।
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘উনি একজন প্রিয় মানুষ ছিলেন। ১৯৯৬ সালে পার্লামেন্টে দেয়া তার সেই ভাষণ একটা চমৎকার বিষয় ছিল। যেখানে জাতির পিতার হত্যাকারীদের সাজা না পাওয়ার সব পথ বন্ধ ছিল, সেখানে তিনি একাই সেই ইনডেমনিটি আইন বাতিল করতে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছিলেন।’
মতিন খসরু সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি বর্তমান জাতীয় সংসদের আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন।
১৫ মার্চ করোনা পজিটিভ এলে তাকে সম্মিমিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরবর্তী সময়ে করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলেও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৪ এপ্রিল মৃত্যু হয় তার।