বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ‘এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’ শব্দ বাদ দেয়ার বিরোধী বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এ ইস্যুতে ‘বাম গণতান্ত্রিক’ জোটের অংশ হিসেবে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দলটি।
বাংলাদেশের পাসপোর্টে এতদিন ধরে লেখা থাকত ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’ (এ পাসপোর্ট ইসরায়েল ছাড়া সব দেশের জন্য প্রযোজ্য)। তবে নতুন ই-পাসপোর্টে এটি সংশোধন করে লেখা হচ্ছে ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড।’
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাসপোর্টে এই পরিবর্তনে ইসরায়েল নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের কোনো বদল হবে না এবং যত দিন পর্যন্ত সেখানে দুই রাষ্ট্র নীতি বাস্তবায়ন না হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ‘এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’ শব্দটি তুলে নেয়া হয়েছে পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মান রক্ষার জন্য এবং এর মানে এই নয় যে, বাংলাদেশের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে কোনো পরিবর্তন করা হয়েছে। বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ইসরায়েলে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। বাংলাদেশ সরকার ইসরায়েলের ব্যাপারে তার অবস্থান থেকে সরে আসেনি এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশ তার দীর্ঘদিনের অবস্থানে অটল আছে।’
তবে মঙ্গলবার বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা অভিযোগ করেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের দুই রাষ্ট্র নীতির পরিপন্থি। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতেই এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলা হয় বিবৃতিতে।
জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের ভার্চুয়াল সভায় সরকারের এ সিদ্ধান্তকে জাতিসংঘের দ্বিরাষ্ট্র নীতিরও পরিপন্থি বলে উল্লেখ করা হয়।
বাম গণতান্ত্রিক জোটে রয়েছে সিপিবি, বাসদ (খালেকুজ্জামান), বাসদ (মার্ক্স,বাদী গণসংহতি আন্দোলন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লিগ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্ক্সবাদী), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন।
জোটের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ফিলিস্তিনিদের আবাসভূমি দখল করে ইসরায়েল একটি জোরপূর্বক প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র। যা মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা পৃথিবীতে মার্কিন মদদে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পারিচালনা করে আসছে। ১৯৪৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বহু ফিলিস্তিনি নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যা করেছে। গাজা ও পশ্চিম তীরের সামান্য ভূমি বাদে সমগ্র ফিলিস্তিন ভূমি দখল করেছে এবং প্রতিনিয়ত যুদ্ধ, হত্যা সংঘটিত করে চলেছে।
‘জাতিসংঘ দুই রাষ্ট্র নীতির মাধ্যমে সমাধানসূত্র খোঁজার চেষ্টা করেছিল। বাংলাদেশও সেই দুই রাষ্ট্র নীতিকে সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু গত দুই বছর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাদের দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করে জাতিসংঘের ওই নীতিকে বাস্তবে প্রত্যাখ্যান করেছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যুদ্ধবাজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদদে ইসরায়েল আজ গোটা দুনিয়ায় যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করছে। তাদের গোয়েন্দা ডিভাইস আজ বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দারা ব্যবহার করছে। এদিকে মার্কিন-ভারত-ইসরায়েলের মধ্যে সামরিক চুক্তি রয়েছে যা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য হুমকিস্বরূপ। আর এই যুদ্ধ-উন্মত্ততায় শামিল হওয়ার জন্য ভারত-মার্কিনকে খুশি করার জন্যই কি বাংলাদেশ পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েলের নাম প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা দেশবাসীর প্রশ্ন।’
এ বিষয়ে জোটের বাইরেও দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন সিপিবির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
দলের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাম জোটের বিবৃতিতে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে সেটা আমাদের পার্টিরও বক্তব্য। বাম জোট যখন কোনো বিবৃতি দেয় তখন প্রত্যেক পার্টির কনসার্ন নিয়েই দেয়। সুতরাং আলাদাভাবে দেখার সুযোগ নেই, একই বক্তব্য আমাদেরও।
পার্টি ফোরামে বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো শুধু আজকে থেকে নয়, এসব নিয়ে তো আমাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফোরামে আলাপ হয়ই।’
অন্যদিকে, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ নিয়ে সিপিবি আর বাম জোটের বক্তব্য একই। আমরা গত মঙ্গলবার বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের ভার্চুয়াল সভা থেকে এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। সিপিবি ও বাম জোট এ বিষয়ে একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।’