বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিলেট-৩ আসন: আওয়ামী লীগের ‘হকল খাড়া’

  •    
  • ২৫ মে, ২০২১ ১১:৪০

সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর থেকেই এই আসনে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন দলটির মনোনয়ন পেতে আগ্রহীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত অন্তত দুই ডজন নেতার নাম শোনা গেছে।

একটি আসনের জন্য মনোনয়ন চান অন্তত দুই ডজন নেতা। সবাই আবার একই দলের।

সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলটিতে রীতিমতো প্রার্থীজট দেখা দিয়েছে। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, প্রবাসী, ব্যবসায়ী, পেশাজীবীসহ নানা অঙ্গনের ব্যক্তিরা এই আসনে নৌকার প্রার্থী হতে তৎপরতা শুরু করেছেন।

স্থানীয় থেকে জাতীয় পর্যায়ের এতসংখ্যক নেতা একটি আসনের প্রার্থী হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করায় দক্ষিণ সুরমার দাউদপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা বশির উদ্দিন ঠাট্টা করে বলেন, ‘ইনো দেখি হকল খাড়া’। (এখানে দেখি সবাই প্রার্থী হচ্ছেন।)

দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ নিয়ে সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১১ মার্চ মারা যান। আগামী জুন মাসের মধ্যে শূন্য হওয়া এই আসনে উপনির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তা পিছিয়ে যায়। তবে সোমবার নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে জুলাইয়ের মধ্যে এ আসনে নির্বাচন হবে। ২ জুন নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে, কয়েসের মৃত্যুর পর থেকেই এই আসনে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন দলটির মনোনয়ন পেতে আগ্রহীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত অন্তত দুই ডজন নেতার নাম শোনা গেছে।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন প্রয়াত সাংসদ কয়েসের স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরীও। আগে রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও স্বামীর মৃত্যুর পর মাঠে নামেন তিনি।

কয়েসের স্ত্রী ছাড়াও এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে আগ্রহীদের মধ্যে রয়েছেন দলটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুর রকিব মন্টু।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল আলম রুহেল, কোষাধ্যক্ষ শমসের জামাল, সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু জাহিদ ও বালাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুর রহমান মফুর, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাছিত টুটুল, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা সভাপতি সাইফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ মুজিবুর রহমান জকনও।

এ ছাড়া বেশ কয়েকজন প্রবাসীও আছেন এই তালিকায়। এদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আ স ম মিসবাহ, ম্যানচেস্টার আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এনাম উল ইসলাম ও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মনির হোসাইন।

বাঁ থেকে অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন ও জেলা আ. লীগ সদস্য সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব

কয়েসের মৃত্যুর পর এই আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিএনপির একাধিক নেতার নামও শোনা গিয়েছিল। তবে গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়ে দিয়েছেন, সিলেট-৩ সহ উপনির্বাচন হওয়া ৪টি আসনে অংশ নেবে না বিএনপি।

একসময় জাতীয় পার্টির (জাপা) ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনে আলাদাভাবে নির্বাচন করতে চায় দলটি। দলের একাধিক প্রার্থী এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন।

এখনও এই আসনে জাপার বড় ভোটব্যাংক রয়েছে বলে ধরা হয়। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান মহাজোট থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য এরই মধ্যে প্রচারণা শুরু করেছেন।

এ ছাড়া জাপার হয়ে এই আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আব্দুল মুকিত খান ও সিলেট-২ আসনের সাবেক সাংসদ ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়াও প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।

কয়েসের মৃত্যুর পরপরই সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় পোস্টারিং ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে তৎপরতা শুরু করেন। কয়েসের মৃত্যুতে শোক জানানো, ঈদের শুভেচ্ছা জানানোসহ নানা উপলক্ষে পোস্টারিং করে প্রচার শুরু করেছেন তারা। করোনাকালীন নির্বাচনী এলাকায় ত্রাণ বিতরণও করতে দেখা গেছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের। আর প্রবাসী মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও দেশে এসে তৎপরতা শুরু করেছেন।

মনোনয়নপ্রত্যাশী মিসবাহউদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করে আসছি। ৪৫ বছর ধরে রাজনীতি করছি। এই আসনে আমি গত নির্বাচনেও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম। তবে দলের সিদ্ধান্ত মেনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি। আশা করছি, এবার দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’

চিকিৎসক নেতা এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের সঙ্গে ১৯৭৩ সাল থেকে জড়িত। বিএনপি যখন ক্ষমতায় এলো, তখন আমি নিগৃহীতও হয়েছি। পারিবারিকভাবেও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ও এই এলাকায় আমার পরিচিতি আছে। তাই রাজনৈতিক পরিক্রমায় এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা আমার ইচ্ছা। এখন যদি আমার দল এবং দলের নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেন, তাহলে আমি নির্বাচন করব। এবং আমি জয়ের ব্যাপারে পুরোপুরি আশাবাদী।’

দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহের কথা জানিয়ে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু জাহিদ বলেন, ‘যারা মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন, তাদের মধ্যে দুয়েকজন ছাড়া কেউই রাজনীতিবিদ নন। তারা অনেকেই ব্যবসায়ী, পেশাজীবী। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে রাজনীতিবিদকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া প্রয়োজন।’

কয়েসের মৃত্যুর পর তার ভাই যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ব্যবসায়ী আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা গিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ভাই নয়, প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কয়েসের স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরী। ঈদের পর দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছেন তিনি। স্বামীর অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে প্রার্থী হতে চান বলে জানিয়েছেন ফারজানা।

তবে মনোনয়নের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান।

তিনি বলেন, ‘যারা মনোনয়নপত্র কিনবেন তারা মাঠপর্যায়ে কে কী অবস্থানে আছেন সে ব্যাপারে তদন্ত হবে। সে রিপোর্ট যাবে নেত্রীর কাছে। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো তালিকা পাঠানোর নির্দেশনা এখনও আসেনি। তাই নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন তাকেই আমরা সমর্থন করব।’

তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসনের ভোটারসংখ্যা মোট ২ লাখ ৫৫ হাজার ৩০৯ জন। মোট ১১ বার নির্বাচন হওয়া এই আসনে আওয়ামী লীগ চারবার, বিএনপি তিনবার এবং জাতীয় পার্টি তিনবার জয় পেয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর