বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানের অন্যায়-অত্যাচার ক্ষমা করে দিয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে শনিবার ‘ন্যাশনাল সলিডারিটি ফর ফ্রি প্যালেস্টাইন’ এর উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আপনি যদি ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত হতে চান, তবে সবচেয়ে কঠিন যে কাজটি করতে হবে তা হলো কূটনৈতিক তৎপরতা। কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হলে আমাদের ছোটখাটো সব ভুল-ভ্রান্তি ভুলে যেতে হবে।
‘পাকিস্তানিরা আমাদের ওপর যে অন্যায় করেছিল তার জন্য তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়ে তাদেরসহ তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া সবাইকে নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। আর আমাদের এখান থেকে ১০ হাজার সামরিক জনবল ফিলিস্তিনিতে পাঠাতে হবে।’
নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি কাশ্মীরি ও ভারতের মাওবাদীদেরও বাংলাদেশের সমর্থন দেয়া উচিত বলে মনে করেন জাফরুল্লাহ।
‘তা না হলে বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা হবে। বঙ্গবন্ধুর সংবিধানে বলা আছে, পৃথিবীর যেখানেই আত্মরক্ষার সংগ্রাম চলবে সেখানেই আমরা তাদের পাশে থেকে সাহায্য করব।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে ইসরায়েল সহায়তা করতে চেয়েছিল বলে জানালেন জাফরুল্লাহ। প্রসঙ্গটি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের জেনারেল ওসমানী ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ তাদেরকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, যে রাষ্ট্র মানবিক ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে অত্যাচার চালায়, তাদের সাহায্য আমাদের প্রয়োজন নেই।
‘ইসরায়েল কত ভয়ঙ্কর তা আমরা দেখেছি ষাটের দশকে। আমি ১৯৬৯ সালে ইসরায়েল ভ্রমণে দেখেছি কীভাবে তারা নাগরিকদের ট্রেনিং দেয়।’
আলোচনা সভায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সত্তর বছর ধরে একটা জাতি লড়াই করছে। আমরা তাদের এই লড়াইয়ের প্রতি সংহতি জানাই।
‘আজ ক্ষমতাসীনরা ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। তারা আবার দেশের বিক্ষোভকারীদেরও গ্রেপ্তার করছে। এটা সব ফ্যাসিবাদীদের একই চরিত্রের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। আমরা আজ যে সংহতি জানাচ্ছি, তা সব দেশের মজলুম মানুষের প্রতি এবং যে প্রতিবাদ এটা সকল জালিমের বিরুদ্ধে।’
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের প্রতি এই সংহতি জানাতে পেরে ভালো লাগছে। সেইসঙ্গে আমাদের নিজেদের দেশের প্রতিও নজর দিতে হবে। সরকার একই সাথে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কথা বললেও অন্য দিকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য পাসপোর্ট থেকে একসেপ্ট ইসরায়েল (ইসরায়েল ব্যতীত) শব্দ যুগল তুলে দিয়েছে।
‘তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে আগামী নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে একচ্ছত্রভাবে ক্ষমতায় আসার পথ পরিষ্কার করতে চায়। আজ আমাদেরকেও যেন ফিলিস্তিনের মতো ভোগান্তিতে পড়তে না হয় এবং কোনো সাম্রাজ্যবাদীর কবলে পড়তে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
সভায় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম (বীর প্রতীক), অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, একুশে পদক প্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু ড. সুকোমল বড়ুয়া, সামরিক বিশেষজ্ঞ মে. জে. (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, কমরেড খালেকুজ্জামান আহমদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।