হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাসিমুখ দেখে এসে নিজের ভালো লাগার কথা জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে দলের নেতা ও চিকিৎসকরা যখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন, তখন ফখরুল জানালেন কেমন দেখে এসেছেন তিনি।
শুক্রবার রাজধানীতে এক আলোচনায় ফখরুল বলেন, ‘আমি গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে ম্যাডামকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। অনেক দিন পর তার মুখে হাসি দেখেছি, যেটা এই কয়দিন ছিল না। একেবারেই ছিল না।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবে মহিলা দল আয়োজিত এক সভায় কথা বলছিলেন তিনি।
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। শুরুতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় থেকে চিকিৎসা নিলেও ২৭ এপ্রিল ভর্তি করা হয় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে।
হাসপাতালে করোনা থেকে সেরে ওঠার বিষয়টি জানা গেলেও চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিয়ে যেতে আবেদন করে পরিবার।
তবে ৯ মে সে আবেদন নাকচ করার কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সেদিন তিনি বলেন, ‘আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য সেখানে পাঠিয়েছিলাম। আইন মন্ত্রণালয় থেকে তাদের যে মত এসেছে, তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ৪০১ ধারায় খালেদার সাজা স্থগিতের সুবিধা দেয়া হয়েছে। ফলে তাকে দ্বিতীয়বার সাজা মওকুফ করে বিদেশে পাঠানোর অবকাশ ৪০১ ধারায় দ্বিতীয়বার করার সুযোগ নেই।’
সরকারের এই বক্তব্য আসার আগ পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিদিনই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে আপডেট তথ্য আসছিল। তবে সরকার তার অবস্থান জানিয়ে দেয়ার পর আর কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি।
ফখরুল বলেন, ‘সবাই জানেন, বেগম জিয়া করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। পোস্ট কোভিডের অনেকগুলো জটিলতা দেখা দেয়, শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আমি তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ, যারা সম্পূর্ণ আন্তরিকতা নিয়ে তার চিকিৎসা করছেন। প্রতিদিন তার মেডিক্যাল বোর্ড করছেন, প্রতিদিন তার চিকিৎসার মনিটর করছেন।’
জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনায় বক্তব্য রাখছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
দলীয় প্রধান এখন কেমন আছেন, সেটা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল চিকিৎসকদের কাছ থেকে জেনেছি, তার শরীরে টেম্পারেচার নেই, শ্বাসকষ্ট নেই। কিন্তু পোস্ট কোভিড জটিলতায় তার হার্ট ও কিডনি অ্যাফেক্টেড। এটা নিয়ে চিকিৎসকেরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, চিন্তিত।’
বিদেশে চিকিৎসার আবেদন প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, সরকার আবেদনে সাড়া দেয়নি। তারা মনে করে, বেগম জিয়া যদি দেশের বাইরে যান, তাহলে আবার তিনি তাদের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করবেন। ভয়টা কেন, ভয়টা এ কারণেই এ দেশের জনগণের যে নেতা, সেটা তিনি।’
সাংবাদিকদের এককাট্টা হওয়ার আহ্বান
সরকারি নথি চুরির মামলায় প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি তুলে ধরে ফখরুল গণমাধ্যমকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান।
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে। রোজিনা ইসলামেরর মতো মেয়েরা তো আছে। তারা তো মাথা তুলে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে। আমি অনুরোধ করব বিভক্তিগুলো রাখবেন না। একটা-দুইটা-তিনটা-চারটা সাংবাদিক ভাইদের মধ্যে ইউনিয়ন, অ্যাসোসিয়েশন। তাহলে কী হচ্ছে? একজনের যে ভাষা, একজনের যে বক্তব্য, সেটা কিন্তু সেই জোর পাচ্ছে না। আজকে সবাই মিলে একজোট হয়ে বলেন যে, সাংবাদিক নির্যাতন চলবে না, নির্যাতন চলবে না। তাহলে দেখবেন যে আস্তে আস্তে সম্মান বাড়ে।’
সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম ইস্যুতে গণমাধ্যমকর্মীদের ঐক্যে তাগিদ দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব
সাংবাদিকদের ফখরুল বলেন, ‘শুধু একটা অনুরোধ থাকবে, আপনারা অন্যায়কে অন্যায় বলবেন, স্পেটকে স্পেট, কালোকে কালো বলেন, সাদাকে সাদা বলেন। আসুন না আমরা নিজের দেশটাকে বাঁচানোর জন্য আমরা সবাই মাথা তুলে দাঁড়াই, অন্তত একবার দাঁড়াই। তাহলে দেখবেন অনেক কিছু সহজ হয়ে যাবে।'
দেশে দুই দানব
দেশে দুই দানব- এমন মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘কোভিড দানব তো আসলে গোটা বিশ্বকে একদম তছনছ করে দিয়েছে। এখন বর্তমান সরকার এই দানবের মতোই বাংলাদেশের ৫০ বছরের যত অর্জনকে একদম লণ্ডভণ্ড, ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে।’
রোজিনা ইসলাম কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘এর আগে ৪২ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সাগর-রুনির হত্যাকারীদের এখন পর্যন্ত খুঁজেই বের করতে পারেনি।’
মানুষ তার নিজস্ব প্রয়োজনে উঠে দাঁড়াতে শুরু করেছে মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমাদের সেই সংগ্রাম শুরু করতে হবে, সেই যুদ্ধ শুরু করতে হবে, যে সংগ্রাম আমরা এই দানবকে সরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে মুক্ত করব, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব। আমরা আশা করি, মানুষ জেগে উঠবে, এই সরকারের পতন হবে।’
মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের পরিচালনায় আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, বর্তমান সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, মহিলা দলের নেত্রী নাজমুন নাহার বেবী, নেওয়াজ হালিমা আরলী, নিলোফার চৌধুরী মনিও বক্তব্য রাখেন।