জনগণের দল আওয়ামী লীগের কাছে এখন জনগণ কেউ না বলে মন্তব্য করে আক্ষেপ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
‘দুর্ভাগ্য আমাদের যে, আজকে আওয়ামী লীগের মতো একটি দল যারা এক সময় জনগণের ভিত্তি ছিল, তারা জনগণের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছেন তাদের কাছে এখন জনগণ কেউ নয়। তারা জনগণের পাশেও নেই।
বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
ফখরুল বলেন, ‘তাদের (আওয়ামী লীগ) এখন কাজী জেবুন্নেসার মতো আমলা অথবা পুলিশ, র্যাব এই ধরনের সম্প্রদায়কে নিয়ে তাদের টিকে থাকতে হচ্ছে। এটা একদিকে যেমন লজ্জার, ধিক্কার, আরেকদিকে তেমনি ভীতিরও।’
সম্প্রতি সচিবালয়ে প্রথম আলোর পত্রিকার জ্যেবিএনপির উদ্যোগে ‘অবরুদ্ধ গণতন্ত্র, শৃঙ্খলিত গণমাধ্যম, মুক্তি পথ কী?’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিন শুনানির রায় বিলম্বের ঘটনা তুলে ধরে এর সমালোচনা করেন বিএনপি নেতা।
ফখরুল বলেন, ‘এখানে ড. খন্দকার মোশাররফ আছেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাহেব আছেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আছেন, আমাদের সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ সাহেব আছেন। আমাদের সঙ্গে যে কী আচরণ করার হয় সেটা তো আমরা ধর্তব্যের মধ্যে নেই না।
‘আমরা যে রাজনীতিবিদ, আমাদের প্রাপ্য-এটা হবে। কিন্তু দ্যাটস দি রিয়েলিটি। এই জিনিসটা আমাদের বুঝতে হবে এটাই রাষ্ট্রের চরিত্র। এই রাষ্ট্র যারা শাসন করছেন তারা রাষ্ট্রকে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার রাষ্ট্র বাকশাল প্রতিষ্ঠার জন্য তারা অতীতেও করেছিলেন, সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন।’
তিনি বলেন, ‘কোথায় যাবেন? জুডিশিয়ারি! আজকে রোজিনা ইসলামের জামিনের শুনানি হয়েছে। রায় দিবে রোববার। সেইম ওল্ড প্র্যাকটিস।‘
ফ্যাসিবাদী ভীতি ছড়িয়ে দেশকে একেবারে একটা অন্ধকারের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল। বলেন, ‘সেই ফ্যাসিবাদকে আমাদের পরাজিত করতে হবে-সেটাই একমাত্র মুক্তির পথ। সংগ্রাম-আন্দোলন এবং মুখোমুখি হওয়া-এটা ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প পথ নেই।‘
রোজিনা ইসলামের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যখন আমাদের লোকজনদেরকে ধরে নিয়ে যায়, যখন রিমান্ডে দেয়, যখন মারদোর করে নির্যাতন করে, গুম করে, খুন করে তখন আমরা দেখি যে, দুর্ভাগ্যভাবে অনেক সংবাদ মাধ্যমে সেগুলো সম্পর্কে নিরব থাকে। কেউ কেউ আবার আপনার ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে সেটাকে ডিফেন্ড করে সরকারের ভূমিকাটা কী। এই জিনিসগুলো কিন্তু ডবল স্ট্যান্ডার্ড। আজকে কেন এই অবস্থা?’
রোজিনা ইসলামের পক্ষে সব সাংবাদিকরা্ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা শুনেছেন বিএনপি নেতা। তবে এই ঐক্য টিকবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘এই ঐক্য কতক্ষণ টিকবে? সাগর-রুনির হত্যার পর দুই পক্ষই তারা এক সঙ্গে রাস্তায় নেমেছিলেন। ৪/৫ দিনও যায়নি। একজন আপনার উপদেষ্টা হয়ে গেছেন সরকারের, আর কয়েকজন হালুয়া-রুটি দিয়ে তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।
‘যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা হালুয়া-রুটির সন্ধানে থাকব, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই ফেভারের সন্ধানে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই যে, রোজিনা ইসলামের মতো সাহসী সাংবাদিক যারা নিজের জীবন বিপন্ন করে আজকে সত্য কথাগুলো তুলে ধরে তাদেরকে রক্ষা করতে পারবে না –এটাই বাস্তবতা।
‘আজকে অলিউল্লাহ নোমান লন্ডনে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে, আজকে মাহমুদুর রহমানকে দেশে ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে, শফিক রেহমানকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি এটাও বলতে শুনেছি যে, মাহমুদুর রহমান কোনো সাংবাদিক নন, সম্পাদক নন, এটাও বলতে শুনেছি শফিক রহমান তো আসলে কোনো সাংবাদিক নন। এই যে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।‘
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আজকে গণমাধ্যম বন্দি যে বন্দি তার ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র একটি প্রমাণ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর নির্যাতন, হেনেস্তা ও অপমানের ঘটনা, সর্বশেষে তাকে গ্রেপ্তার হতে হয়েছে।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, ‘আজ রক্তবীজের ছাপ কিন্তু সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে। এই জেবুন্নসাকে যেরকম দেখেছেন, এই জেবুন্নেসা হচ্ছে আমাদের সামনে এই চরিত্র যে, আমলাতন্ত্রে জেবুন্নেসায় ভরে গেছে।’
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মানবাধিকার সম্পাদক আসাদুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।