বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আউয়ালকে ফোনে বলা হয় ‘স্যার, ফিনিশ’

  •    
  • ২০ মে, ২০২১ ১৯:০৯

এ ঘটনার চার থেকে পাঁচ দিন আগে দুপুরবেলা আউয়ালের কলাবাগান অফিসে তাহের ও সুমনকে নিয়ে হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করা হয়। সুমনের নেতৃত্বে প্রায় ১০-১২ জন সক্রিয়ভাবে কিলিং মিশনে অংশ নেন। এ ছাড়া সহযোগী হিসেবে আরও বেশ কয়েকজন যুক্ত ছিলেন।

রাজধানীর পল্লবীতে সাহিনুদ্দীনকে নিজ সন্তানের সামনে কুপিয়ে হত্যা করার পর মো. সুমন নামের এক দুর্বৃত্ত সাবেক সংসদ সদস্য মো. আউয়ালের মোবাইলে ফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সুমন বলেন, ‘স্যার, ফিনিশ’।

আউয়াল লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান। তিনি এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি।

র‌্যাবের অভিযানে ভৈরবে গ্রেপ্তার হয়েছেন আউয়াল। তা ছাড়া চাঁদপুর ও পটুয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আরও দুই আসামিকে। তারা হলেন মো. হাসান ও জহিরুল ইসলাম বাবু।

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ১৬ মে রাজধানীর পল্লবীতে নিজ সন্তানের সামনে সাহিনুদ্দীন নৃশংসভাব খুন হন। তাকে সন্ত্রাসীরা চাপাতি, রামদাসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। পরদিন সাহিনুদ্দীনের মা মো. আকলিমা রাজধানীর পল্লবী থানায় ২০ জনের নামে মামলা করেন। এতে সাবেক এমপি আউয়ালকে প্রধান আসামি করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় ১৪-১৫ জনকে।

র‌্যাব এ ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে ও জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করে।

আসামিদের গ্রেপ্তারের বর্ণনা দিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৪ বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে চাঁদপুরের হাইমচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে হাসানকে গ্রেপ্তার করে।

বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় ভৈরব সদর এলাকা থেকে আউয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তা ছাড়া ভোর ৫টার দিকে পটুয়াখালীর বাউফল থেকে জহিরুল ইসলাম বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এই হত্যাকাণ্ডে থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

আসামিদের বরাতে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, মূলত জমি নিয়ে বিরোধের জেরেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এ ঘটনার চার থেকে পাঁচ দিন আগে দুপুরবেলা আউয়ালের কলাবাগান অফিসে তাহের ও সুমনকে নিয়ে হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করা হয়। সুমনের নেতৃত্বে প্রায় ১০-১২ জন সক্রিয়ভাবে কিলিং মিশনে অংশ নেন। এ ছাড়া সহযোগী হিসেবে আরও বেশ কয়েকজন যুক্ত ছিলেন।

গ্রেপ্তারের পর সম্মেলনে সাবেক এমপি আউয়াল (মাঝে), সুমন (বাঁয়ে) ও জহিরুল ইসলাম বাবু। ছবি: সাইফুল ইসলাম

হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মিশনে অংশগ্রহণকারীরা ১৬ মে বিকেলে ঘটনাস্থলে জড়ো হন। মীমাংসার কথা বলে কৌশলে সাহিনউদ্দীনকে ডেকে আনা হয়। এ সময় তার শিশুসন্তানকে নিয়ে আসেন সাহিনউদ্দীন। তাকে প্রথমে সুমন, মনির, মানিক, হাসান, ইকবাল ও মুরাদসহ ১০-১২ জন এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। শেষ পর্যায়ে শরীরের ওপরের অংশে মনির এবং হাঁটু ও হাত পায়ে মানিক কুপিয়ে সাহিনুদ্দীনের মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

‘ওই সময়ে বাবুসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে নজরদারি করেন। হত্যাকান্ডটি ৫ থেকে ৭ মিনিটের মধ্যে সংঘটিত হয়। ঘটনা শেষে সুমন হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আউয়ালকে মোবাইলে ফোন করে জানান ‘‘স্যার, ফিনিশ’’। তাদের আবার অল্প কিছুক্ষণ কথা হয়। এর পর গা ঢাকা দেন।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সুমন দীর্ঘদিন ধরে আউয়ালের বিভিন্ন ব্যবসা, জমি দখল ও কাজের সাথে জড়িত। আউয়ালের সাথে সাহিনুদ্দীনের জমি নিয়ে যখন বনিবনা হচ্ছিল না, তখন সুমনদের একটি ক্ষোভ ছিল সাহিনুদ্দীনকে মেরে ফেলার জন্য। ভিকটিমের পরিবারের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, এই হত্যাকাণ্ডে ৩০ লাখ টাকা চুক্তি হয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে আউয়াল ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আউয়াল যে প্রকল্পটা করেছেন, সেখানে সাহিনুদ্দীনের পরিবারের সাথে আউয়ালের ২০০৪ সাল থেকে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। আউয়ালের আলীনগর প্রকল্পে সাহিনুদ্দীনের বেশ কিছু জমি রয়েছে। আউয়ালকে তার জমি দিতে রাজি হননি। এর জেরেই খুন হন তিনি।’

মামলার প্রধান আসামি সাবেক এমপি আউয়াল একজন আবাসন ও জমি ব্যবসায়ী। সুমন তার সন্ত্রাসী গ্রুপ দিয়ে জমিদখল ও আধিপত্য বিস্তার করতেন। আওয়ালের কাছ থেকে তারা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা মাসোহারা পেতেন। ক্ষেত্রবিশেষ কাজ অনুয়ায়ী অতিরিক্ত টাকা পেতেন।’

নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

এ বিভাগের আরো খবর