করোনা মহামারিতে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়া বুমেরাং হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঠাকুরগাঁও শহরে নিজ বাসভবনে সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্ক পরায় বাধ্য করতে পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা দিলে আরেকটা বুমেরাং হবে। পুলিশ কী করবে আমরা জানি। মাঝখান থেকে যেটা হবে সাধারণ জনগণের হয়রানি আরও বাড়বে।
‘মানুষ খেতে পায় না, অথচ তাকে ঘরের মধ্যে বসে থাকতে বলছেন। বসে থাকবে আগে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে দিন। আমরা তাদের এককালীন ৩ মাসে ১৫ হাজার করে টাকা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম সরকারকে।’
ফখরুল বলেন, ‘বর্তমানে প্রায় ২ কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করছে। বিভিন্ন সেক্টরে প্রায় ৬ কোটি মানুষ কর্মহীন। এই ৬ কোটি মানুষের জন্য প্রণোদনা দেয়নি সরকার। প্রণোদনা গেছে গার্মেন্টস, ইন্ডাস্ট্রির মালিকদের জন্য। রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের প্রণোদনা দেয়ার প্রস্তাব করেছিলাম। তারা ৭৭ শতাংশ কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
‘এই কথাগুলো সরকারকে বলে কোনো লাভ হয় না। সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন সরকারের নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। পরিকল্পনাবিহীন সাধারণ মানুষজন লকডাউন মানবে কীভাবে।’
ফখরুল বলেন, ‘শুধু দুর্নীতি ও লুটপাটের জন্যই তারা আজ জনগণকে দুর্ভোগে ফেলেছে। তাদের কোনো ক্ষমতা নেই, যোগ্যতা নেই। ঈদের জন্য সরকার মাত্র ৩ দিন ছুটি ঘোষণা করেছে। কিন্তু মানুষ তো থেমে নেই। দুর্ভোগের মধ্যে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে তারা বাড়িতে গেছে, আবার ছুটি শেষে তাড়াহুড়ো করে ঢাকায় ফিরছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে সাধারণ মানুষ।
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে অনেক আগে থেকেই বলে আসছি করোনা মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। তারা কর্ণপাত করেনি। এখানে সরকারের চরম ব্যর্থতা, উদাসীনতাই শুধু বলব না, এটা তাদের অজ্ঞানতা ও ব্যর্থতা। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের কোনো ইচ্ছা নেই।
‘এখানে দুটি সুবিধা পায় তারা। একটা হলো মানুষ যদি মরে যায় মরুক আর অন্যটা হলো সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য খাতে বিরাট দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করা। প্রণোদনা ঘোষণা করে তারা লুটপাট করে খায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে সরকার নিজেরাই বিভিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে বিরোধীদের ওপর চাপাচ্ছে। বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গণগ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের ঈদের মধ্যেও জামিন দেয়া হয়নি।’
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান, সহসভাপতি আল মামুন আলম, দপ্তর সম্পাদক মামুনুর রশিদ, সারোয়ার চৌধুরী, আব্দুল হামিদসহ অনেকে।
পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়ার চিন্তা
মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পর এবার পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়ার চিন্তা করছে সরকার।
এজন্য সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮ সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। জানিয়েছেন, সংসদ অধিবেশন না থাকায় আর আইন সংশোধনে দীর্ঘ প্রক্রিয়া এড়াতে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির কথা ভাবা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা যেটা দেখছি, অনেক লোকজন বাইরে যাচ্ছেন। শতভাগ মাস্ক পরার বিষয়টিও অনেকেই পালন করছেন না।… কিন্তু আমাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে হবে। শতভাগ মাস্ক আমাদের চালু রাখতে হবে। যার কোনো বিকল্প নাই।’
গত বছরের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর থেকেই সরকার সবাইকে মাস্ক পরার অনুরোধ জানিয়ে আসছে। মাস্ক না পরলে সরকারি সেবা দেয়া হবে না বলেও নীতি নেয়া হয়।
তবে সচেতনতার অভাব নিয়ে নানা আক্ষেপের মধ্যে মার্চ থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দেয়। আর এই পরিস্থিতিতে গত ৫ এপ্রিল থেকে দেয়া হয় লকডাউন।
দ্বিতীয় ঢেউয়ে করোনা আরও বেশি সংক্রামক ও প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার পর মাস্ক পরার প্রবণতা আগের চেয়ে বাড়লেও এখনও মাস্কহীন মানুষের অভাব নেই পথেঘাটে।
মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে গত ২১ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মেডিক্যাল শিক্ষা বিভাগ। আদেশ অমান্য করায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বিপুলসংখ্যক মানুষকে জরিমানাও করে।