বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চার দশক

  •    
  • ১৭ মে, ২০২১ ০০:০৪

এর আগে শেখ হাসিনা বিদেশে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত করা হয় তাকে। এরপর গত চার দশক তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া দলটির।

১৯৮১ সালের ১৭ মে বিকেল। ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়েই তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দর হাজির লাখ লাখ মানুষ। তাদের ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে কাঁপছে বিমানবন্দর এলাকা। এমন পরিবেশে ছয় বছরের নির্বাসন কাটিয়ে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা।

এর আগে শেখ হাসিনা বিদেশে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত করা হয় তাকে। এরপর গত চার দশক তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া দলটির।

সেদিন বিমানবন্দর থেকে শেখ হাসিনা সরাসরি যান মানিক মিয়া এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে। সেদিন লাখ লাখ মানুষের সামনে তিনি বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।

‘আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেলসহ সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই।’

তার হাতে গড়া সংগঠন আওয়ামী লীগও পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নানামতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দেশে ফিরেই আওয়ামী লীগকে পুনরায় সংগঠিত করেন তার কন্যা শেখ হাসিনা।

সেদিনের স্মৃতিচারণ করে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আজ থেকে ৪০ বছর আগে বঙ্গবন্ধুর রক্তে গড়া পতাকা আমরা প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। সে পতাকা হাতে জেল-জুলুম নির্যাতনের মুখে ৪০ বছরে তিনি আওয়ামী লীগকে এই উপমহাদেশের শক্তিশালী একটি সংগঠনের রূপান্তর করেছেন।

‘যেদিন আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা বাংলার মাটি স্পর্শ করেছিলেন সেদিন ছিল ঝড়-বৃষ্টি। আমরা স্লোগান তুলেছিলাম “ঝড় বৃষ্টি আঁধার রাতে, শেখ হাসিনা আমরা আছি তোমার সাথে”। এই গগন বিদারী স্লোগানে আমরা তাকে বরণ করেছিলাম। লক্ষ লক্ষ লোক সেদিন কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসেছিল। আমার নিজের কাছে মনে হয়েছিল শেখ হাসিনার বেশে আমরা বঙ্গবন্ধুকেই বরণ করছি।’

আওয়ামী লীগের আরেক প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু বলেন, ‘৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হারানোর পর তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন এবং নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে ১৭ মে’র মতো এমন একটি শুভ দিনের অপেক্ষায় ছিল বাঙালি। শেখ হাসিনার মাঝে বঙ্গবন্ধুকে খুঁজে পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিল তারা। তাই তো দীর্ঘদিন নির্বাসন শেষে শেখ হাসিনার স্বদেশ ফেরার দিন বিমানবন্দরে ছিল বাঁধ ভাঙা মানুষের জোয়ার।

‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ভূলণ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দল ভাঙার রাজনীতি, রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন, সর্বোপরি রাজনীতিকে বিরাজনীতিকরণের মাধ্যমে দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এই প্রতিকূল অবস্থায় দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করে দেশকে আজ উন্নয়ন আর অগ্রগতির পথে নিয়ে এসেছেন শেখ হাসিনা।’

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের নিজ বাসভবনে সপরিবারে হত্যা করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সে সময় ছোট বোন শেখ রেহানাসহ জার্মানিতে ছিলেন শেখ হাসিনা। এ কারণেই বেঁচে যান তারা।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নানা পথ পাড়ি দিয়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেন শেখ হাসিনা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে পড়ে নানা ভাগে। ১৯৭৯-৮০ সালের দিকে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা ভারত সফর করে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসতে শেখ হাসিনাকে রাজি করানো।

১৯৮১ সালের ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয়। এতে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাকে সভাপতি নির্বাচিত করেন দলটির নেতারা। ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আব্দুল মালেক উকিল, ড. কামাল হোসেন, জিল্লুর রহমান, তোফায়েল আহমেদসহ কয়েকজন নেতা দিল্লি সফর করেন। পরবর্তী চারদিন সেখানে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বেই কয়েকটি বৈঠকে অংশ নেন তারা।

ওই বছরেরই ১৬ মে শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ দিল্লি থেকে কলকাতা আসেন। কলকাতা থেকে ১৭ মে আসেন ঢাকায় তারা।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আজকে বারবার মনে হয়, ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর রক্তে গড়া পতাকা আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়ে আমরা সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম। তিনি একমাত্র নেত্রী যিনি ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে ৫ বছর ক্ষমতায় থেকে ১৫ জুলাই ২০০১ সালে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন।

‘সর্বমোট চারবার তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে বাংলাদেশকে আলোকিত করেছেন। আজ বাংলাদেশ অন্ধকার থেকে আলোকিত হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎসহ অনেক উন্নয়নমূলক কাজ তিনি করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিলেন। আজ সারা বিশ্ব কোভিড নাইন্টিনে আক্রান্ত। বাংলাদেশও আক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু দেখেন আপনারা গত কয়েক দিনে ধীরে ধীরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপে বাংলাদেশে এ হার কমে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শূন্য হাতে শুরু করেছিলেন দুটি বিষয়কে সামনে রেখে। একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, আরেকটি অর্থনৈতিক উন্নতি। বাংলার স্বাধীনতা তিনি এনে দিয়েছেন। কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি বঙ্গবন্ধু শেষ করে যেতে পারেননি। সে অসমাপ্ত কাজ তার কন্যা শেখ হাসিনার হাতে শেষ হতে চলেছে।’

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরেই তার কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়নের মহাসড়কে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন তিনি। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতার বাড়ি ও পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও কর্ণফুলী টানেলের কাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুত গতিতে। এই অগ্রযাত্রা শেখ হাসিনার স্বদেশে ফিরে আসার ফল।

‘প্রধানমন্ত্রীর সাহসী পদক্ষেপে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচার যেমন সম্পন্ন করে চলেছেন, তেমনি ছিটমহল সমস্যার সমাধান, সমুদ্রসীমানা বিরোধেরও নিষ্পত্তি করেছেন শেখ হাসিনা।’

কর্মসূচি

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন দেশব্যাপী প্রতিবছর বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করলেও এবার করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দিবসটি পালন করবে।

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চার দশকপূর্তি উপলক্ষে ‘শেখ হাসিনার চার দশক: বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটি।

এই তথ্যচিত্র প্রদশর্নীর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম এবং রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে।

দুই দিনব্যাপী (১৬ ও ১৭ মে) এই প্রদর্শনী ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে।

দিবসটি উপলক্ষে সোমবার বেলা ১১টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর এবং বিকেল ৩টায় মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা অনুষ্ঠান হবে।

এ ছাড়া সারা দেশে মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করা হবে।

এ বিভাগের আরো খবর