আইনি কোনো সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে চাওয়ার পেছনে বিএনপির ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের ঈদ উপহার বিতরণ আয়োজনে যোগ দিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে তারা বিদেশ নিয়ে যেতে চান, এর আইনি কোনো সুযোগ নাই এবং তাদের বিদেশে নেয়ার উদ্দেশ্য ভিন্ন। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দেয়া নয়, বিদেশ নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনীতি এবং বিদেশ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে এখন যে ষড়যন্ত্র ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড করা হয়, সেগুলোকে আরও তৎপর করা।
‘বেগম খালেদা জিয়ার সঠিক জন্মদিন কোনটা, সেটা জনগণ জানতে চায়’ মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমিও দেখেছি, করোনা টেস্টের রিপোর্টে বেগম খালেদা জিয়ার জন্মতারিখ ৮ মে, ১৯৪৬ সাল। এই গোমর যখন ফাঁস হয়ে গেছে, আজকে নাকি ফখরুল সাহেব সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন, নিশ্চয় বলেছেন, এটি সঠিক নয়।’
খালেদা জিয়ার সঠিক জন্মতারিখ কোনটা জনগণ জানতে চায় মন্তব্য করে সরকারের এই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘আপনাদের পাসপোর্টে একটা জন্মতারিখ, স্কুল সার্টিফিকেটে আরেকটা, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে অন্য একটা, আবার করোনা রিপোর্টে আরেকটা জন্মতারিখ। আপনাদের ঠিকটা কোনটা, সেটা জনগণ জানতে চায়।’
বিএনপির রাজনীতির সমালোচনা করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এই ধরনের ভাঁওতাবাজির রাজনীতি, মিথ্যার রাজনীতি, জনগণকে ধোঁকা দেয়ার রাজনীতি পরিহার করুন। টেলিভিশনে উঁকি দিয়ে দিয়ে সরকারের সমালোচনা করলেই রাজনৈতিক দল হওয়া যায় না।’
আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি এবং খালেদা জিয়াই প্রতিহিংসার রাজনীতি করে। সেজন্যই তারা ১৫ আগস্ট মিথ্যা জন্মদিন পালন করে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছিল, ১৯৯৬ সালে পাতানো নির্বাচন করে বঙ্গবন্ধুর খুনিকে বিরোধীদলীয় নেতা বানানো হয়েছিল, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার তারা বন্ধ করেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব ভুলে গিয়ে প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে প্রায় দেড় বছর ধরে কারাগারের বাইরে রেখেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘আমাদের নেত্রী প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন না, বরং আমাদের নেত্রী যে সহমর্মিতা, যে সহানুভূতি প্রদর্শন করেছেন, তা থেকে বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার অনেক কিছু শেখার আছে।’
আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজি সায়ীদুর রহমানের সভাপতিত্বে এ আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং মৎস্যজীবী লীগের নেতারা।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত খালেদা জিয়াকে গত ২৭ এপ্রিল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ইতিমধ্যে করোনার নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ এলেও, তার নানা শারীরিক সমস্যা রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতে চান স্বজন ও দলীয় নেতারা।
৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত। দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়।
২০০৮ সালের ৮ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় খালেদার। পরে উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়। ওই বছরই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর বিএনপি নেত্রীকে দেশের বাইরে না যাওয়া ও বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেয়ার শর্তে ছয় মাসের জন্য দণ্ড স্থগিত করিয়ে মুক্তি দেয়া হয়। এরপর দুই দফা বাড়ানো হয় দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হাঁটুর জটিলতা ছাড়াও নানা ধরনের রোগ আছে বলে তার দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে তার চোখেও অপারেশন করা হয়।