করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেয়া জন্মতারিখকে ‘আসল জন্মদিন’ জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মৃত্যুভয়ে ভীত হয়ে খালেদা জিয়া জন্মদিনের রহস্য উন্মোচন করেছেন।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির উদ্যোগে আয়োজিত ১৩টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে করোনার সুরক্ষাসামগ্রী ও খাদ্যসহায়তা বিতরণ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন নিয়ে এর আগে নানা ধরনের বিতর্ক দেখা গেছে। বিশেষ করে তিনি ১৫ আগস্টকে নিজের জন্মদিন দাবি করে তা উদ্যাপনে কেকও কেটেছেন।
শুধু ১৫ আগস্ট নয়, তার আরও অন্তত দুটি জন্মদিনের কথা সামনে এসেছে। জন্মদিন নিয়েও খালেদা জিয়া রাজনীতি করেছেন বলে দাবি করেছেন ওবায়দুল কাদের।
কাদের বলেন, ‘বেগম জিয়ার মেট্রিকুলেশন সনদ অনুযায়ী জন্মদিন ৯ আগস্ট ১৯৪৫। বিবাহ সনদ অনুযায়ী জন্মদিন ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫। আবার পাসপোর্ট অনুযায়ী জন্মদিন ১৯ আগস্ট। আবার তিনি দাবি করেন, তার জন্মদিন ১৫ আগস্ট ১৯৪৫।
‘একজন মানুষের এতগুলো জন্মদিন থাকা নিয়ে দীর্ঘদিনের রহস্য এখন তিনি নতুন করে উন্মোচন করেন।’
নানা নাটকীয়তা শেষে গত ১১ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষায় খালেদা জিয়ার করোনা আক্রান্তের খবর জানানো হয়। সেই নমুনা পরীক্ষার জন্য দেয়া তথ্যে খালেদা জিয়ার জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ৮ মে ১৯৪৬।
সে বিষয়টিকে তুলে ধরে কাদের বলেন, ‘তাহলে জনগণের মনে প্রশ্ন, তবে কি খালেদা জিয়া মৃত্যুভয়ে তার আসল জন্মদিনের কথা এত দিন প্রকাশ করেননি?
‘মৃত্যুভয়ের কাছে কি পরাজিত হলো জন্মদিন নিয়ে তাদের অপরাজনীতি? আমরা প্রায়ই বলি, বিএনপির রাজনীতি বৈপরীত্যে ভরা। তা নতুন করে প্রমাণের প্রয়োজন নেই বলে আমরা মনে করি।’
খালেদার সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দীর্ঘদিন মানুষ অসত্যের সঙ্গে চলতে পারে না; পারে না সত্যকে লুকিয়ে রাখতে। হাতের তালু দিয়ে যেমন আকাশ ঢাকা যায় না, তেমনি চিরকালের সত্যকে আড়াল করতে পারে না ক্ষণিকের মেঘ।
‘বিভিন্ন সময় জন্মদিবস পালনকারী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন-বিষয়ক আসল সত্য অবশেষে তিনি নিজেই উন্মোচন করলেন।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘অবশেষে থলের বেড়াল মিউ করে বেরিয়ে পড়ল। আমরা এর আগে শুনেছি, ১৫ আগস্টে শোক দিবসে বেগম খালেদা জিয়ার ভুয়া জন্মদিন পালন করা, জাতির পিতার হত্যাকারীদের উৎসাহিত করা; নির্মম সেই হত্যাকাণ্ডকে উপহাস করারই শামিল বলে জনগণ মনে করে।’
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে এত বর্বর, এত নৃশংস হত্যাকাণ্ড হয়নি, যেখানে অবলা নারী, অবুঝ শিশু ও অন্তঃসত্তা নারী টার্গেট হয়েছিল।
‘কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে এ রকম ঘটনা ঘটেনি। অথচ সেই শোকাবহ দিনে একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান, একাধিকবারের প্রধানমন্ত্রী ভুয়া জন্মদিন পালন করে আসছেন।’
‘রাজনীতির নামে বিএনপি নামক দলটির নেতা-কর্মীরা এ দৃষ্টান্তই রেখেছে। বারবার তারা এ ভুয়া জন্মদিবস পালন করেছে। মির্জা ফখরুল সাহেবরা আজকে যখন সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন, নীতি-নৈতিকতার কথা বলেন, কোথায় ছিল আপনাদের নীতি-নৈতিকতা।’
‘আজকে সত্য যখন বেরিয়ে এসেছে, বিএনপি নেতারা বেগম জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা নিয়ে এর আগেও রাজনীতি করেছেন, এখনও করছেন।’
সরকারও খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা করে বলেও মন্তব্য করেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, ‘আমরা তার রোগমুক্তি কামনা করি। তার বয়স বিবেচনায় ও চিকিৎসার সুবিধার্থে মানবিক নেতৃত্ব দেশরত্ন শেখ হাসিনা সাজা স্থগিত করেছেন। বিএনপি নেতারা এখনও বেগম জিয়ার চিকিৎসার চেয়ে রাজনীতিতে অধিকতর মনোযোগী হচ্ছেন।
‘রাজনীতিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। আজকে বেগম জিয়ার করোনা নেগেটিভ হওয়া স্বস্তির খবর। আমরা তার সম্পূর্ণ সুস্থতা কামনা করি। বেগম জিয়ার বিদেশযাত্রার বিষয়ে স্বারাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর বক্তব্য সবাই জেনেছেন। এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই।’
কী বিকল্প ছিল সরকারের কাছে?
করোনায় দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ করার পরও গ্রামমুখী ঢল ঠেকানো নিয়ে সংবাদ প্রচার করায় কয়েকটি দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা একটি বিষয় লক্ষ করছি। দেশি-বিদেশি মিডিয়ার একটি অংশ প্রতিনিয়ত সরকারে বিরুদ্ধে বিষোদগার করে যাচ্ছে।
‘আজকে ফেরিঘাটে, হাটে-বাজারে রাস্তায় মানুষের যে ঢল নেমেছে, সেখানে সরকারকেই দায়ী করা হচ্ছে। তাহলে তো এখন প্রশ্ন করতে হয়, বিকল্প কী ছিল সরকারের সামনে?’
সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কারণেই করোনা সংক্রমণ কমে এসেছে বলেও দাবি করেন কাদের।
বলেন, ‘আজকে সরকারের গৃহীত ব্যবস্থার জন্য কোথায় ১১২ সেখান থেকে ৫০-এ নেমে এসেছে মৃত্যু। কোথায় ৮ হাজার, যেখানে ২ হাজারের নিচে নেমে এসেছে সংক্রমণ।
‘কিন্তু বর্তমানে ঘরমুখী যে ঢল দেখা যাচ্ছে, এতে সরকারের কী দোষ? মানুষ যদি সচেতন না হয়।’
মিডিয়ার দায়িত্ব জনগণকে সচেতন করা উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘আজকে আমি একটি বিদেশি মিডিয়ার সম্প্রচার শুনছিলাম। প্রায় শোনার চেষ্টা করি। লক্ষ করছি, প্রশ্নোত্তরপর্বে উসকানিমূলক প্রশ্ন উপস্থাপকই করছেন। প্রশ্নকর্তা যা বলতে চান না, তাকে দিয়ে তা বলানোর জন্য চেষ্টা করে এই মিডিয়া।’
তিনি বলেন, ‘একটি আন্তর্জাতিক মিডিয়া যার সুনাম আছে তারা যদি এ কাজটা করে, অহেতুক সরকারের বিরুদ্ধে উসকে দেয়, একবারও বলে না গত কয়েক দিনে করোনা সংক্রমণের হার-মৃত্যুহার বেড়েছিল, সেটা কতটা কমে গেছে। এখন সরকার, প্রধানমন্ত্রী তো প্রতিনিয়তই সচেতনতামূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
‘ঈদ উৎসব যেন অন্তিম উৎসবে পরিণত না হয়। আমাদের সকলেরই ক্যাম্পেইনটা করা উচিত। এ দায়িত্ব পালন না করে শুধু সরকারের ব্যর্থতা খুঁজে বের করা এটাই যেন একধরনের মিডিয়া ও কিছু নেতার প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তারা সরকারের অন্ধ সমালোচনা করবেই।’