চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আবেদন আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর তার সামনে দুটি পথ খোলা আছে বলে মনে করছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম।
পথ দুটি হলো- আদালতের সিদ্ধান্ত অথবা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি নেত্রীকে বিদেশ নিয়ে যেতে সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদনটি পর্যালোচনার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল।
খালেদার চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসে। এরপর দুপুরে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়ার বিধান আইনে নেই। ফলে বিএনপি নেত্রীকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়া যাচ্ছে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আইন মন্ত্রণালয় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় খালেদার সাজা স্থগিতের সুবিধা দেয়া হয়েছে। ফলে দ্বিতীয়বার সাজা মওকুফ করে তাকে বিদেশে পাঠানোর অবকাশ ৪০১ ধারায় নেই।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত। দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়।
প্রথমে ২০০৮ সালের ৮ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় খালেদার। পরে উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়। ওই বছরই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর বিএনপি নেত্রীকে দেশের বাইরে না যাওয়া ও বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেয়ার শর্তে ছয় মাসের জন্য দণ্ড স্থগিত করিয়ে মুক্তি দেয়া হয়। এরপর দুই দফা বাড়ানো হয় দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ।
দণ্ডিত খালেদা জিয়ার নির্বাহী আদেশে বিদেশ যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানালেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘একটু আগে আমরা জানতে পারলাম টিভি স্ক্রলের মাধ্যমে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন সাজাপ্রাপ্ত আসামির বিদেশে যাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। এ কথাটা আমি কিন্তু বেশ অনেক দিন আগে থেকেই বলছি।
‘সরকার ওনাকে সাজা স্থগিত করে যে সাময়িক মুক্তি দিয়েছেন, আমরা তো মনে করি সেটাও আইনবহির্ভূত হয়। সাজা থাকা অবস্থায় বিদেশ যাওয়ার অনুমতি আইনের চৌহদ্দির মধ্যে আসে না।’
খুরশীদ বলেন, ‘আমি মনে করি, আইনমন্ত্রী সে মতামত দিয়েছেন, আমরা যে বিচারগুলো দেখছি, যদি সেটাই হয়ে থাকে তবে আইন মন্ত্রণালয় অবশ্যই সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বিদেশে পাঠানোর এখতিয়ার সরকারের নেই। তবে বেগম খালেদা জিয়া আদালতে দরখাস্ত করতে পারবেন। আদালত সেটা ডিসাইড করবে। অথবা রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে পারেন দণ্ড মওকুফের জন্য। আমার মনে হয় এ দুটোই রাস্তা হয়তোবা ওনার জন্য খোলা আছে।’
মানবিক বিবেচনা চান খালেদার আইনজীবী
যে আইনের কথা বলে খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, সেই আইনের ব্যাখ্যাটি ‘মানবিকভাবে’ দেখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপিপ্রধানের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এখন তার (খালেদা জিয়া) অবস্থা অত্যন্ত জটিল বলে আমরা জানতে পেরেছি। সেক্ষেত্রে সরকার আইনের বিধান নিয়ে যে কথাটা বলছেন, ৪০১ ধারা ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী এটি সঠিক নয়।
‘আইনের ব্যাখ্যাটা একটু মানবিকভাবে করতে হবে। এখানে কোনোভাবে লেখা নেই যে, সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা কোনোভাবে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে পারবে না। এমন বক্তব্য নাই।’
খন্দকার মাহবুব বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি মানে ব্যাপক আইন। সেখানে নির্বাহী কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যে, কোনো সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাজা নির্বাহী আদেশে মওকুফ করা যাবে, কমানো যাবে। আর এসব শর্তসাপেক্ষে অথবা শর্তবিহীন দুটোই হতে পারে।’
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। শুরুতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে চিকিৎসা নিলেও ২৭ এপ্রিল ভর্তি করানো হয় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে।
৩ মে খালেদা জিয়ার অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে খালেদার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসলেও হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হাঁটুর জটিলতা ছাড়াও নানা ধরনের রোগ আছে বলে তার দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে তার চোখেও অপারেশন করা হয়।