ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হকের মৃত্যুর পর এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কে হতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। এরই মধ্যে প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর একাধিক নেতা সক্রিয় হয়েছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে তুলে ধরছেন নিজের অবস্থান। অনেকেই এলাকায় লাগিয়েছেন প্রচারণামূলক পোস্টার ও ব্যানার।
রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তারা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচনগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের একাধিপত্য আর বিএনপির এই ঘোষণায় নেতাদের মনে বিশ্বাস জন্মেছে যে, যিনি মনোনয়ন পাবেন, জয় হবে তারই। এ কারণে সহজে সংসদে যেতে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যাও বেশি।
গত ৪ এপ্রিল রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যু হয় ৬০ বছর বয়সী আসলামুলের। তিনি ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সাল ও ২০১৮ সালেও জয় পান।
আসলামুল হকের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী মাকসুদা হককে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে দেখতে চান দলের কর্মী-সমর্থদের একাংশ।
আসলামুলের বড় ভাই মফিজুল হক বেবুও চাইছেন এ আসনে নির্বাচন করতে। তবে তিনি আওয়ামী লীগ করেন না। তিনি জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে ছোট দলের নেতা হলেও আসলামুলের কারণেই এলাকায় তার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।
প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা তাদের মধ্যে থেকে একজনকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান।
যুব মহিলা লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন নানাভাবে তার আগ্রহের কথা জানান দিচ্ছেন। তিনি এর আগে সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের একটি অংশ রয়েছে তার সঙ্গেও।
সাবিনা আক্তার তুহিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সবাই আমার পক্ষে আছে। আমি তো এলাকায় কাজ করেছি; সবাই আমাকে খুব ভালোভাবে চেনেন।
‘যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দেন তাহলে অবশ্যই জয়লাভ করতে পারব। সব সময় আমি মানুষের পাশে ছিলাম, আছি। মনোনয়নের বিষয়ে আমি আশাবাদী।’
প্রার্থিতার আলোচনায় মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম হানিফ, শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আগা খান মিন্টু, সাবেক কাউন্সিলর ও অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলের নামও আছে।
ডিপজল বিএনপির সমর্থনে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর হলেও গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম তুলে হইচই ফেলে দেন।
দলীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ আবার সম্ভাবনা দেখেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরীর।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমনিতে সাধারণ মানুষ ফেস্টুন টাঙিয়েছে। তবে আমি করোনা আর লকডাউনের কারণে কারও কাছে যাইনি। এর আগেও দুইবার দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবার আশাবাদী।
‘এই মিরপুরেই আমি দীর্ঘদিন ছাত্র রাজনীতি করেছি। ঢাকা-১৪ আসনে যদি দল আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি সবাইকে নিয়ে এলাকাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলব।’
আসলামুলের মৃত্যুতে গত ১৩ এপ্রিল আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। তবে করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে আসনটিতে উপনির্বাচন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। আর করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে নির্বাচন আপাতত স্থগিত আছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন আসনটিতে উপনির্বাচনের ঘোষণা দিলে মনোনয়ন ফরম ছাড়া হবে। তারপর দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় চূড়ান্ত করা হবে প্রার্থী।