বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টিকা: ভারতের সঙ্গে বোঝাপড়া, সরকারের বিচার চান ফখরুল

  •    
  • ২৬ এপ্রিল, ২০২১ ১৫:৫৮

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ভারত থেকে টিকার চালানের ৫০ লাখ আসে বাংলাদেশে। এরপর প্রতি মাসে আসার কথা ছিল সমপরিমাণ। কিন্তু সিরাম কেবল আর একবার ২০ লাখ টিকা পাঠিয়েছে। এর বাইরে দুই বারে ৩২ লাখ টিকা এসেছে উপহার হিসেবে।

করোনার টিকা আনতে সরকার কেবল ভারতের ওপর নির্ভর করেছে অভিযোগ করে টিকার স্বল্পতার জন্য সরকারের বিচার চেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই সঙ্গে চুক্তি করেও ভারতীয় প্রতিষ্ঠান টিকা না দেয়ায় দেশটির সঙ্গে সরকারকে বোঝাপড়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে পরামর্শ দিয়েছেন পদত্যাগ করার।

ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট চুক্তি অনুযায়ী টিকা দিতে না পারার কারণে বাংলাদেশে করোনার প্রথম ডোজের টিকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার দিন সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপি নেতা। এ সময় তিনি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী তিন কোটি ৪০ লাখ টিকা আনতে চুক্তি করে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে। এই টিকার উদ্ভাবক অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি।

তখন বিশ্বে ফাইজার ও মডার্না, স্পুৎনিক ও চীনের সিনোভ্যাকের টিকা প্রয়োগ শুরু হলেও প্রথম দুটি টিকার জন্য যে অবকাঠামোগত সুবিধা দরকার সেটি বাংলাদেশের নেই। স্পুৎনিকের টিকার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। আর সিনোভ্যাকের টিকা তখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দেয়নি।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ভারত থেকে টিকার চালানের ৫০ লাখ আসে বাংলাদেশে। এরপর প্রতি মাসে আসার কথা ছিল সমপরিমাণ। কিন্তু সিরাম কেবল আর একবার ২০ লাখ টিকা পাঠিয়েছে। এর বাইরে দুই বারে ৩২ লাখ টিকা এসেছে উপহার হিসেবে।

সিরাম টিকা পাঠাতে পারছে না রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে। আর সিরাম বলছে, যুক্তরাষ্ট্র কাঁচামাল রপ্তানি না করায় তারাও কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে উৎপাদন করতে পারছে না। এ কারণে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশেও টিকা পাঠাতে পারছে না তারা।

সিরাম থেকে আসা করোনার টিকা নিয়ে বিএনপির অবস্থান প্রশ্নাতীত নয়। দলের মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী এই‌ টিকাকে অনিরাপদ দাবি করে তা না নিতে দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন। এমন বলেছেন, এই টিকা নিলে মানুষ মারা যাবে।

তবে ফখরুল টিকা নিয়েছেন, নিয়েছেন দলটির আরও বেশ কয়েকজন নেতা।

তিনি সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন তোলেন সরকার কেন কেবল একটি উৎস থেকে টিকা নিতে চেয়েছে।

তিনি বলেন, ‘একটি মাত্র উৎস থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত যে, আত্মঘাতী হতে পারে সে বিষয়ে বিএনপি বরাবরই সতর্ক করে এসেছে।’

সিরাম থেকে টিকা আনতে মধ্যস্ততা করেছে বাংলাদেশের বেক্মিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। তারাই সিরামের লোকাল এজেন্ট। এটি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান।

টিকার সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে বেক্সিমকো ফার্মা সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে। ভারত সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যেন ঢাকা আলোচনা করে, সেই আবেদনও জানানো হয়েছে।

ফখরুল বলেন, ‘ভারত সরকারের রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণে সিরাম ইনস্টিটিউট বাকি ভ্যাকসিন পাঠাতে অপারগতা জানিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এখন যে পরিমাণ মজুদ আছে সেটাতে আগামী ১২ দিন চাহিদা মোতাবেক চলবে। কিন্তু তারপর আর সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ প্রায় ৫৬ লাখ এবং দ্বিতীয় ডোজ প্রায় ১৬ লাখ মোট ৭২ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ৬০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছে যেখানে হার্ড ইনিউনিটি আনতে কমপক্ষে ১২ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া প্রয়োজন।

‘সরকার এখন অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে ভ্যাকসিনের জন্য। অথচ এক বছর আগেই বিএনপি এ বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল।’

সিরাম ছাড়াও সরকারের টিকা পাওয়ার কথা ছিল ন্যায্যতার ভিত্তিতে সারা বিশ্বে টিকা বিতরণে গড়ে উঠা জোর কোভ্যাক্স থেকে। ছয় কোটি ৭০ লাখ টিকা পাওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছিল সংস্থাটি। পরে আরও বেশি দেয়ার কথাও ছিল।

কিন্তু কোভ্যাক্সেরও টিকা পাওয়ার কথা ছিল সিরাম থেকেই। আর তারাও এখন পর্যন্ত কোনো টিকা দিতে পারছে না।

সরকারের বিচার হবে

সরকার টিকা আমদানিতে দুর্নীতির সুযোগ খুঁজেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘জনগণের সঙ্গে প্রতারনা করে সমগ্র জাতিকে চরম স্বাস্থ্য বিপর্যায়ের দিকে ঠেলে দিয়ে নিজেদের অযোগ্যতা, দায়িত্বহীনতা ও দুর্নীতির প্রমাণ দিয়েছে। জনগণকে এই চরম অনিশ্চয়তা ও জীবনের ঝুঁকি তৈরি করার অপরাধে সরকারকে অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ ব্যর্থতার দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে মূল্য পরিশোধিত ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে। ব্যর্থ হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।’

হেফাজত নেতাদের নির্যাতনের অভিযোগ

কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতের নেতাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করারও অভিযোগ করেন ফখরলি। তিনি বলেন, ‘তাদের থেকে তথাকথিত মিথ্যা স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে এই জঘন্য মিথ্যাচার চালানো হচ্ছে বলে সভা (বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক) মনে করে। সভা অবিলম্বে এইসব মিথ্যাচার বন্ধ করার আহ্বান জানায়।’

গত ২৬ মার্চ থেকে এক সপ্তাহ সহিংসতার পাশাপাশি হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৫ মে তাণ্ডবের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

বিএনপির উদ্বেগ এখানেই। আট বছর আগে সেই ঘটনায় হেফাজত নেতারা বিএনপির সম্পৃক্ততার তথ্য দিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে এক হেফাজত নেতা জানিয়েছেন শাপলা চত্বরে অবস্থানের আগে হেফাজতের বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরী বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে। বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টো সে সময় হেফাজতকে পাঁচ কোটি টাকা দিয়েছিলেন।

যদিও হেফাজত এক বিবৃতিতে এই তথ্য অস্বীকার করেছে। বিএনপিও বিষয়টি স্বীকার করতে চাইছে না।

তবে আট বছর আগে হেফাজত যখন শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে দেশে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়, সে সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিবৃতি দিয়ে দেশবাসীকে হেফাজতের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল অবশ্য এই প্রসঙ্গে কিছু বলেননি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খানও ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত ছিলেন।

এ বিভাগের আরো খবর