বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের তিন সদস্যের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় ৯ বছর আগে। এর মধ্যে মধ্যে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত হয়েছেন সাধারণ সম্পাদক। চাকরির সুবাদে সাংগঠনিক সম্পাদক রাজনীতি ছেড়েছেন। আর সভাপতির নাম জড়িয়েছে ধর্ষণ মামলায়।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলছেন, অস্ত্র ও তরুণী অপহরণ মামলায় জড়িয়ে সাধারণ সম্পাদক সংগঠনের সুনাম আগেই ক্ষুণ্ণ করেছেন। এতে শেষে পেরেক ঠুকেছেন সভাপতি। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
তার সঙ্গে একমত মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ করেছেন। তবে এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, ২০১১ সালে গঠন করা হয় বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি। এতে জসীম উদ্দিনকে সভাপতি, অসীম দেওয়ানকে সাধারণ সম্পাদক ও তৌছিক আহম্মেদ রাহাতকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।
ছাত্রলীগের এই ইউনিটের কমিটি ঘোষণার কিছুদিন পরেই চাকরির সুবাদে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন সাংগঠনিক সম্পাদক রাহাত। পরে দুই নেতার ওপর ভর করেই চলতে থাকে কমিটির কার্যক্রম।
শীর্ষ নেতাদের মধ্যে জসীম সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণের অনুসারী এবং পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর অনুসারী ছিলেন অসীম।
তাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১২ সালে। কিন্তু রাজনৈতিক দ্বন্দ্বসহ নানা কারণে তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে ব্যর্থ হন। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর তারা একজোট হয়ে কমিটি গঠনের চেষ্টা করেন। তবে সেই চেষ্টাও আলোর মুখ দেখেনি।
শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পর রাজনৈতিক পালাবদলের কারণে অসীম রাজধানীতে বসবাস শুরু করেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে তাকে আটকের পর অস্ত্র ও অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। এরপর শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ওই মাসের ১৯ তারিখ অসীমকে বহিষ্কার করেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন।
এ অবস্থায় হিরণপন্থি জসীম সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর প্রভাবের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েন।
সম্প্রতি জসীমের বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণের অভিযোগ করেন এক তরুণী। বুধবার ওই অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। এ ঘটনায় বিব্রত দলের নেতা-কর্মীরা।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জসীমের কর্মকাণ্ডে আমরা বিব্রত। তার বিরুদ্ধে যাতে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয় সেজন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।’
স্থানীয় কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বরিশাল বিভাগের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কমিটি মহানগর ছাত্রলীগ। সেই সংগঠনের নেতারাই যদি নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকেন তাহলে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি কতটুকু আর ভালো থাকবে।
‘তাছাড়া কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে প্রায় ৯ বছর হয়ে গেছে। কমিটি না হওয়ায় এই নেতারা চান্স পেয়ে নানা অপকর্ম করছেন। ছাত্রলীগের এই জসীম অনেক অবৈধভাবে সম্পত্তি অর্জন করেছেন। ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পাওয়ার আগে তিনি এবং তার পরিবার কী অবস্থায় ছিল আর এখন কী অবস্থায় রয়েছে সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি ভবন, একটি মার্কেটসহ অনেক জমি-জমার মালিক জসীম। তাছাড়া বরিশাল সদরেও ব্যাপক সম্পত্তি রয়েছে তার।’
বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি নষ্টকারীদের অবলিম্বে বহিষ্কার এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। ধর্ষণের অভিযোগ যার বিরুদ্ধে তিনি ছাত্রলীগের মত ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের নেতা হতে পারে না। আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে দাবি জানাচ্ছি, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসীমকে বরখাস্ত করে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি রক্ষা করা হোক।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসীম উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র নতুন নয়। কারা এসব করছে সবাই জানে। থানায় বসে থেকে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা করানো হয়েছে। যে মেয়েকে দিয়ে মামলা করানো হয়েছে সে আমাদের আত্মীয়। আমি বিয়ে করেছি রোববার আর সোমবার রাতেই আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দেয় থানায়।
‘আমাকে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করা তো হয়েছেই, এখন ব্যক্তি ইমেজ নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। এর আগেও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। সরকারি বরিশাল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের সামনে ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিম রেজা হত্যা মামলায় আমাকে জড়ানো হয়েছিল, পরে সত্য উঠে আসে। কিছুদিন আগে নগরীর সদর রোডে টপ টেনের নতুন শো রুমে হামলা ও ডাকাতি করে আমার নাম বলা হয়েছিল। পরে আসল ঘটনা সবাই জেনেছে। সেই ধারাবাহিকতায় এই ষড়যন্ত্র। আমাকে রাজনৈতিকভাবে কিছু না করতে পেরে এখন এই পন্থা অবলম্বন কারা করছে সেটা আপনারা জানেন।’
জসীমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার ফোন দেয়া হয়। কিন্তু তারা সাড়া দেননি। পরে দুই জনের মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠানো হলেও তার জবাব দেননি।