ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের চালানো তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার চেয়ে সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেছেন মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী।
কাসেমী হেফাজতে ইসলামের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
হেফাজতের তাণ্ডব ইস্যুতে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের কাছে লিখিত বক্তব্য পাঠান আব্দুর রহিম কাসেমী। সেখানে তিনি হেফাজতের নেতা-কর্মীদের এমন আচরণ ও কর্মকাণ্ডকে ইসলামবিরোধী হিসেবে তুলে ধরেছেন।
গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে হেফাজতের কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষের জেরে সহিংসতা হয় চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
সে দিন এবং পরের দুই দিনও তাণ্ডব চলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তারা শহরের কেন্দ্রস্থল বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে গিয়ে হামলে পড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে। সেটি ভেঙে আগুন দেয়ার পাশাপাশি তারা আগুন দেয় শহরের রেলস্টেশন, আনসার ক্যাম্প, মৎস্য অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সমাজসেবা কার্যালয়সহ বেশ কয়েকটি সরকারি অফিসে।
ওই তাণ্ডবের পর কয়েকটি মামলাও করেছে পুলিশ। তবে সেই মামলায় ছিল না হেফাজতে ইসলামের কোনো নেতার নাম।
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলা তাণ্ডবের পর এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হেফাজতে ইসলামের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। এরইমধ্যে পদত্যাগের খবর দিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই নেতা।
শুক্রবার পদত্যাগ করার কথা জানিয়ে সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো লিখিত বক্তব্যে আব্দুর রহিম কাসেমী বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর উদ্যাপন উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন কেন্দ্র করে দেশব্যাপী হেফাজতে ইসলামের ডাকে যে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, তা নজিরবিহীন ও অমানবিক। দেশ ও জনগণের জানমালের ক্ষতি কোনোভাবেই ইসলামসম্মত হতে পারে না।
‘তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে এ সমস্ত কার্যক্রম থেকে নিষ্ক্রিয় থাকি এবং আমার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সব মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্রদের দেশ ও ইসলামবিরোধী কাজে যোগদান না করতে বাধ্য করি।’
কাসেমী বলেন, ‘বিভিন্ন স্থাপনায় হরতাল চলাকালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ জানমালের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়, তাতে আমি এবং আমার মাদ্রাসার কোনো ছাত্র অংশগ্রহণ করেনি। আমি হেফাজতের চলমান কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত নই। তাদের নাশকতামূলক কার্যক্রম অবৈধ মনে করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে হেফাজতে ইসলামের সব কার্যক্রম, জাতীয় ও জেলা কমিটির পদ থেকে পদত্যাগ করছি। যাদের প্ররোচনায় রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি।’