হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বিএনপি নয়, সরকারের সম্পর্ক রয়েছে বলে নানা উদাহরণ দিয়ে দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বাসায় বসে মিটিং করে তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে কওমি মাতা হিসেবে উপাধি দেয়া হয়েছে। আমরা হেফাজতের সাথে সম্পৃক্ত হলাম, না আপনারা।’
বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপি নেতা। ‘করানো মোকাবিলায় স্থানীয় সরকারের ভূমিকা’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক জেএসডি।
কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীনতার পর কখনও তেমন গুরুত্ব পায়নি। তবে ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি, গোলাম আযমের জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি হেফাজতের আলোচিত নেতা মামুনুল হকের বাবা আজিজুল হকের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গেও জোটবদ্ধ হয় বিএনপি।
কওমিপন্থিরা বিএনপির সঙ্গে জোটে যায় কওমি সনদের স্বীকৃতির আশায়। এরপর ২০০১ সালে এই জোট একসঙ্গে নির্বাচন করে। বিএনপি শেষ মুহূর্তে সনদের স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিলেও সেটি কার্যকর করতে পারেনি। এ নিয়ে কওমিপন্থিদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয় এবং একটি অংশ বিএনপির সঙ্গ ছেড়ে দেয়।
২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা নারী নীতিবিরোধী আন্দোলন করতে কওমিপন্থিরা গড়ে তোলে অরাজনৈতিক জোট হেফাজতে ইসলাম। এটি আলোচিত হয়ে উঠে ২০১৩ সালে। সে সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলন গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তাদের নাস্তিক দাবি করে তাদের ফাঁসির দাবিতে ৫ মে রাজধানী অবরোধ করে হেফাজত।
দিনভর সহিংসতার মধ্যে রাতে শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে হেফাজত নেতারা সরকার পতনের ডাক দেন আর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও তাদের সমর্থকদেরকে মাঠে নামার আহ্বান জানান।
এরপর নানা ঘটনাপ্রবাহে হেফাজতের সে সময়ের আমির শাহ আহমেদ শফী সরকারের কাছাকাছি আসেন আর কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরায়ে হাদিসকে ইসলামিক স্টাজিডে মাস্টার্সের সমমান দেয় সরকার। গণভবনে এক অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে হেফাজতের সিংহভাগ নেতা সে সময়ও বিএনপি জোটের সদস্য ছিলেন। আর গত সেপ্টেম্বরে আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর যে কমিটি গঠন করা হয়, তাতে বিএনপিপন্থিরাই সর্বেসর্বা হয়ে যান।
এর মধ্যে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রতিবাদে হেফাজতের কর্মসূচি সহিংস হয়ে উঠে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় বেপরোয়া হামলার পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হতে থাকে, এসব তাণ্ডবে বিএনপির সম্পৃক্ততা আছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, তাণ্ডব চালিয়েছে হেফাজত আর গ্রেপ্তার হচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
তিনি বলেন, ‘২৬ মার্চের পর থেকে গত কয়েকদিনে বোধ হয় কয়েক হাজার গ্রেপ্তার করে ফেলেছে এবং শুনলে অবাক হবেন আমাদের চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকাতে দলের কর্মীরা রাতে বাসায় থাকতে পারে না। কেরানীগঞ্জে ব্লক রেইড করে আমাদের নেতা-কর্মীদের অ্যারেস্ট করছে। কিছু বলতে গেলেই তারা বলে যে হেফাজতের সাথে সম্পৃক্ত আছে।’
২৬ মার্চ হেফাজতের মোদিবিরোধী কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আপনি গণতন্ত্রের কথা বলবেন অথচ কাউকে প্রতিবাদ করতে দেবেন না, আপনি কাউকে কথা বলতে দেবেন না, অন্যায়গুলোকে তুলে ধরতে দেবেন না, ভুলগুলোকে চিহ্নিত করতে দেবেন না, তাহলে কীভাবে একটা সরকার চলতে পারে? যেটা তো আর যাই হোক গণতান্ত্রিক সরকার হতে পারে না।’
ভ্যাকসিন পাব তো?
করোনা মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনায় এখন আমাদের আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কোনো কিছু করার নেই।’
ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার পর উদ্ভূত পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন প্রথমবার যারা নিয়েছেন, তারা দ্বিতীয়বার সবাই ভ্যাকসিন পাবেন কি না তা আমি জানি না। কারণ যা শুনতে পাচ্ছি যে, ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছে।
‘একজন কিছুদিন আগে বলেছেন যে, একটা মাত্র দেশের উপরে এই যে নির্ভর করে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা- এটাও তো একটা ক্রিমিনাল ওফেন্স। আপনাকে একটা সরকার চালাতে হলে অনেক পথ খোলা রাখতে হবে। আপনি চীনকে বলে দিলেন যে, না তোমার এটা আমার দরকার নেই, ফেরত দিয়ে দিলেন।
‘আপনারা ভারত থেকে নেয়া শুরু করলেন। তাও আবার অনেক বেশি দামে, ব্যক্তি মালিকানায় একজন ব্যবসায়ীর হাতকে শক্তিশালী করার জন্য। এটা গভার্মেন্ট টু গভার্মেন্ট নেয়া যেত। অন্যান্য দেশগুলো নিচ্ছে।’