করোনা মহামারিতে প্রান্তিক পর্যায়ে বিতরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দের যে ঘোষণা এসেছে, তাকে জাতির সঙ্গে তামাশা উল্লেখ করে কঠোর সমালোচনা করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
রাজধানীতে এক প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচিতে রিজার্ভ থেকে দরিদ্রদের জন্য এক বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন জাফরুল্লাহ। বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ জাতি কখনও মেনে নেবে না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নাগরিক প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।
আগের দিন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণমাধ্যমকে জানান, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে চলমান লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র, দুঃস্থ, ভাসমান ও অসচ্ছল মানুষের সহায়তায় ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র, দুঃস্থ, ভাসমান ও অসচ্ছল মানুষকে সহায়তার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে প্রধানমন্ত্রী এই অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন।’
স্থানীয় তালিকার ভিত্তিতে একেবারে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত জনগণ এই সুবিধা পাবেন।
তবে করোনাভাইরাসের মধ্যে এটিই একমাত্র সহায়তা নয়। গত বছরের মতোই প্রান্তিক পর্যায়ের ৩৫ লাখ মানুষকে আড়াই হাজার টাকা করে দেয়া হবে। কাজ হারানো শ্রমিকদের জন্যও আলাদা বরাদ্দ আছে। ৪৫ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তাও দেয়া হবে।
জাফরুল্লাহ চৌধুরীদের অবস্থান কর্মসূচিতে অন্য বিষয়গুলোর উল্লেখ না করে কেবল এই প্রসঙ্গটি টেনে তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে সরকারপ্রধানের।
গত ১৪ এপ্রিল শুরু হওয়া লকডাউনের মধ্যে শ্রমজীবী মানুষদের আয় কমে যাওয়ায় বিপাকে আছে তারা। গত বছর করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও গরিবদের জন্য ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা দেখা গেলেও এবার সেই উদ্যোগ আর দেখা যাচ্ছে না।
এর মধ্যে একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণা বলছে, করোনাভাইরাসের কারণে দেশে সোয়া দুই কোটি মানুষ নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে দারিদ্র্যসীমায় প্রবেশ করেছে নতুন করে।
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশ দরিদ্র পরিবার সোয়া ২ কোটি অতিক্রম করেছে। এই সোয়া দুই কোটি পরিবারের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাড়ে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। এর মানে হচ্ছে প্রতি পরিবারে সোয়া চার টাকা করে পাবে। সোয়া চার টাকা দিয়ে রমজান মাসে কী খেতে পারে?’
এই সহায়তাকে মশকরা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ উনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া দরকার যে এই মশকরার দিন ফুরিয়ে আসছে। … আপনি সাড়ে ১০ কোটি টাকা দান করে ভিক্ষা দিচ্ছেন কাকে? যার টাকা তাকেই।’
গরিবদের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বরাদ্দের দাবিও জানান জাফরুল্লাহ। বলেন, ‘আপনার ঘোষণা অনুযায়ী, আপনার (সরকার) তহবিলে (রিজার্ভ) আছে ৪৩ বিলিয়ন ডলার। কোনো চিন্তাভাবনা না করে আড়াই কোটি দরিদ্র পরিবারের মধ্যে এক বিলিয়ন ডলার খাদ্য সহায়তা দেন।’
বেসরকারি উদ্যোগেও ত্রাণ তৎপরতার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের যত রাজনীতিবিদ আছেন, সে বিএনপি হোক, কমিউনিস্ট পার্টি হোক, বাসদ হোক; সবাই মিলে চেষ্টা করলে বাংলাদেশ এক লক্ষ ধনী পরিবার, ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সাত দিন চেষ্টা করলে ১০ কোটি টাকা উঠাতে পারি না?’
‘যারা মুক্তিযুদ্ধের সুবিধা নিয়ে, বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে কোটি কোটি টাকা মালিক হয়েছেন, তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মশকরার বিপরীতে আপনারা যদি সাহায্যে না নামেন তাহলে জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না।’