ঈদের পর সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করার ঘোষণা দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না।
দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সাড়ে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দের সমালোচনা করে তিনি এই ঘোষণা দেন।
‘ঈদের পর আন্দোলন’ বিষয়টি গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘রসিকতা’ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রথম মেয়াদের শেষ দিকে এবং দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে বিএনপির নেতারা একাধিকবার ঈদের পরে সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের হুমকি দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, ঈদের পর তীব্র আন্দোলন করবেন, তবে পরে তেমন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচিতে ঘরে ঘরে খাদ্য পৌঁছে দেয়ার দাবিতে মান্না বক্তব্য রাখেন।
এ সময় দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণের জন্য সাড়ে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করায় প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেন বক্তারা। এই সিদ্ধান্তকে জনগণের প্রতি তামাশা বলে উল্লেখ করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
অন্যদিকে, মান্না দরিদ্র পরিবারের জন্য ‘মাত্র’ ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে জনগণের কাছে দুঃখ প্রকাশের আহ্বান জানান।
তবে করোনা ভাইরাসের মধ্যে এটিই একমাত্র সহায়তা নয়। গত বছরের মতোই প্রান্তিক পর্যায়ের ৩৫ লাখ মানুষকে আড়াই হাজার টাকা করে দেয়া হবে। কাজ হারানো শ্রমিকদের জন্যও আলাদা বরাদ্দ আছে। আরও নানা সহায়তা প্রকল্প আছে সরকারের। ৪৫ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তাও দেয়া হবে।
৪৫ লাখ পরিবারের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছানোর স্পষ্ট রূপরেখা জনগণের সামনে উন্মোচনের দাবিও জানান মান্না।
বলেন, ‘দাবি না মানলে ঈদের পর সরকারের সাথে পাঞ্জা লড়া হবে।’
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আ স ম কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়াও। তিনি করোনা পরিস্থিতিতে গরিব মানুষদের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দকে বাস্তবসম্মত দাবি করেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার অনুদানকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাংলাদেশে লকডাউন দিতে হলে মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করে দিতে হবে। সেটা না করে লকডাউন দেয়া প্রতারণা।’
করোনা সংক্রমণ কমাতে কোনো বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেই অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘তথাকথিত লকডাউন জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হচ্ছে না।’
আলোকচিত্রী শহিদুল আলম কবি, সাহিত্যিক, লেখকসহ শিল্পমনস্ক ব্যক্তিদের ‘নীরবতা’ ভেঙে সরব হবার আহ্বান জানান। তিনি দরিদ্র পরিবারের জন্য ১০ কোটি টাকার বরাদ্দকে হাস্যকর দাবি করেন।
আগের দিন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণমাধ্যমকে জানান, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে চলমান লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র, দুঃস্থ, ভাসমান এবং অসচ্ছ্বল মানুষের সহায়তায় ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘লকডাউন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে যে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে তা মেনে নেয়া যায় না। আমরা সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা মেনে নেব না। জনগণের ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই সরকারকে সকল সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী ও রেহনুমা আহমেদ, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ভূইয়াও কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন।