স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে হেফাজত নেতাদের কেউ সাংবাদিকদের কিছু বলেননি।
কী নিয়ে বৈঠক হয়েছে জানতে চাইলে হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় রাত ১০টা থেকে সোয়া ১১টা পর্যন্ত এ বৈঠক হয়। এতে অংশ নেন হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, খেলাফত আন্দোলনের আমির আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, তার ভাতিজা মাওলানা হাবিবুল্লাহ নিয়াজীসহ অন্তত ১০ নেতা।
বৈঠকে পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও অংশ নেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সোমবার দুপুরে হেফাজত নেতারা মালিবাগে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সদরদপ্তরে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
দেশজুড়ে হেফাজতের শীর্ষ কয়েকজন নেতা গত কয়েক দিনে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সংগঠনটির ঢাকার নেতাদের এ তৎপরতা দেখা গেল। এর আগে রাত সাড়ে আটটায় হেফাজতের আমির জুনাইদ বাবুনগরী এক ভিডিওবার্তায় কর্মীদের সাম্প্রতিক সহিংসতায় দুঃখ প্রকাশ করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক চলাকালে রাত ১০টা ৫০ মিনিটে পুরান ঢাকার সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের গাড়ি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাসার সামনে এসে থামে। প্রথমে হাজী সেলিম গাড়ি থেকে নেমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় প্রবেশ করেন। তার পিছু পিছু একই গাড়ি থেকে আরও কয়েকজন ‘হেফাজত নেতা’ মন্ত্রীর বাসায় প্রবেশ করেন। তবে হাজী সেলিম রাত ১১টা ৩ মিনিটে বেরিয়ে যান।
বৈঠক শেষে রাত সোয়া ১১টার দিকে বাসা থেকে বের হন হেফাজতের নেতারা।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবন এলাকায় হেফাজতের দুই নেতা। ছবি: নিউজবাংলাস্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় বৈঠক শুরুর পর হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়জীর কাছে টেলিফোনে জানতে চাওয়া হয় সংগঠনের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী কোথায়।
এ বিষয়ে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনাকে তো এখন পাবেন না।’
কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উনি ঢাকায় একটা মিটিংয়ে আছেন।’
কোথায় জানতে চাইলে অবশ্য কিছু বলেননি ফয়জী।
বৈঠক শেষে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদীকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন। কিছুক্ষণ পরে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বৈঠকে অংশ নেয়া হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি মোবাইল ফোন ধরেননি।
মন্ত্রীর বাসা থেকে বের হওয়ার পর হেফাজত নেতারা। ছবি: নিউজবাংলাহেফাজত নেতারা এমন এক সময় এ বৈঠক করলেন, যখন সহিংসতার কারণে সারা দেশে সংগঠনটির নেতাদের অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের ব্যাপারে সরকারের কঠোর অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
প্রথম দিকে হেফাজতের নিচের সারির কর্মীরা গ্রেপ্তার হলেও ধীরে ধীরে উপরের সারির নেতারাও গ্রেপ্তার হতে শুরু করেছে। সর্বশেষ গত রোববার গ্রেপ্তার হন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক।
হেফাজতের ‘উগ্রতা’ নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়ছেে বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক র্কমর্কতা।
তারা বলেন, শীর্ষ পর্যায়ের আরও কয়েকজন নেতা নজরদারিতে আছেন। শিগগিরই তারা গ্রেপ্তার হতে পারেন।
সাম্প্রতিক তাণ্ডবে হেফাজতের সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত বুধবার গ্রেপ্তার হন সংগঠনের কেন্দ্রীয় দুই সহকারী মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি ও মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী।
ঢাকায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে গত ২৬ মার্চ সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়য়িায় তাণ্ডব চালান হেফাজতের কর্মীরা। এ সময় গুলিতে নিহত হন চারজন।
দুই দিন পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতার সময় দুই দিনে ১২ জন নিহত হন।
এরপর ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে নারী নিয়ে মামুনুল হক অবরুদ্ধ হওয়ার পর হেফাজত কর্মীরা ওই এলাকা ছাড়াও মুন্সিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে তাণ্ডব চালান।
ওই ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা হেফাজতকে সতর্ক করে বক্তব্য রাখতে থাকেন।
অন্যদিকে সাম্প্রতিক ঘটনার পাশাপাশি ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর তাণ্ডবের মামলাও আবার সচল করা হয়।
৫ মের ঘটনায় করা মামলায় গত রোববার রাতে পুলিশ চট্টগ্রাম থেকে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে গ্রেপ্তার করে। এর এক দিন পরই গ্রেপ্তার হন সহপ্রচার সম্পাদক মুফতি শরিফুল্লাহ। তাকেও শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।