জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দলগুলোও মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
শুক্রবার নির্মূল কমিটি আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের এসব কথা বলেন তিনি। ওয়েবিনারের বিষয় ছিল: ‘জামায়াত-হেফাজত চক্রের বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়।’
এখন নানা দলে বিভক্ত হলেও সে সময় কওমি ধারা মূলত দুটি দলে বিভক্ত ছিল। এর মধ্যে প্রধানতম ধারা ছিল নেজামে ইসলাম। পাশাপাশি ছিল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম।
এদের মধ্যে জমিয়তের একটি অংশ মুক্তিযুদ্ধের সময় নিরপেক্ষ থাকলেও বাকিরা জামায়াতে ইসলামের মতোই পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র তুলে নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পর এ কারণে দলগুলো নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হলেও কওমিভিত্তিক দলগুলো জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত না হওয়ায় তাদের সে ভূমিকা চাপা পড়ে যায়। এমনকি বিএনপিতে বিলুপ্ত হওয়ার পর মুসলিম লীগের একাত্তরের ভূমিকা নিয়েও আর খুব বেশি আলোচনা হয়নি। আর এই সুযোগে সাম্প্রতিক সময়ে এই গোষ্ঠী তাদের সেই ভূমিকা লুকানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকালে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতারা নেজামে ইসলামের নেতৃত্বে ছিলেন, যে দল এবং তাদের ঘাতক বাহিনী জামায়াতের চেয়ে কম নৃশংস ছিল না।
“৭১-এ তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতার করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী বাঙালিদের ‘কাফের’, ‘দুষ্কৃতকারী’, ‘ভারতের এজেন্ট’, ‘ইসলাম ও পাকিস্তানের দুষমন’ আখ্যা দিয়ে পাকিস্তানের অখণ্ডতার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিল।”
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। ছবি: সংগৃহীত
নির্মূল কমিটির সভাপতি বলেন, ৭১ এর মতোই তাদের রাজনৈতিক ও আদর্শিক উত্তরসূরিরা আরও ভয়ঙ্কর ভাষায় ভিন্নমত ও ভিন্নধর্মের মানুষের উপর হামলা এবং যাবতীয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।’
তাণ্ডবের পর প্রশাসন মাঠপর্যায়ের হেফাজত কর্মীদের গ্রেপ্তার করলেও জুনায়েদ বাবুনগরী, মামুনুল হকদেরকে কেন গ্রেপ্তার করছে না-সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। বলেন, ‘হেফাজতের মতো জঙ্গি সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যে কোনোও ধরনের সমঝোতা শুধু ক্ষমতাসীন দলের জন্য আত্মঘাতী হবে না- এটি বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে, যা বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত চক্রের মূল উদ্দেশ্য।’
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তারা দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকা ও পশ্চিমের হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিতে চাইছে। এ ক্ষেত্রে যে কোনও ধরনের নমনীয়তা, কালক্ষেপণ কিংবা দ্বিধা দেশ ও জাতির জন্য সমূহ বিপর্যয় ডেকে আনবে।’
ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননও। তিনি বলেন, ‘হেফাজত-এর নেতৃবৃন্দের বড় অংশ ১৯৭১-এ স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘মোদিবিরোধী বিক্ষোভ ছিল মূলত বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান নস্যাৎ করার চক্রান্ত। তাদের লক্ষ্য বাংলাদেশে তালেবানি অভ্যুত্থান ঘটানো। বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে জ্ঞাত নয়। বিএনপি না বুঝে তাদেরকে মৌন সমর্থন দিয়েছে।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি, নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুলও এ সময় বক্তব্য রাখেন।