হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা আহমদ শফীকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে এই ঘটনার উপযুক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার চেয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
বুধবার মন্ত্রী ঢাকায় তার বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়ে কথা বলেন বিষয়টি নিয়ে।
তিনি বলেন, ‘মওলানা শফী সাহেব আমার নির্বাচনী এলাকার ও আমার পাশের ইউনিয়নের একজন আলেম ছিলেন। তার মতাদর্শ নিয়ে নানা কথা থাকলেও মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন সজ্জন। যারা মামলা করেছেন, তারাও আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ। আমি চাই, আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ মওলানা শফী সাহেবকে যারা নির্যাতন করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে, তাদের উপযুক্ত দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক।’
‘নির্যাতনের মাধ্যমে মওলানা শফীর মৃত্যুর ঘটনার বিচার চেয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছিল’ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘ তদন্তের পর পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।’
‘নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার বিষয়টি স্পষ্ট এবং তখনকার পত্রপত্রিকায় এবিষয়ে সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্যাতনের বিভিন্ন চিত্র প্রকাশিত হয়েছিল’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা শতবর্ষী মওলানা শফীর চরম অসুস্থতাকালে তার কক্ষ ভাঙচুর করা, হাসপাতালে নেয়ার পথে এক ঘন্টা গাড়ি আটকে রাখা, অক্সিজেন টিউব খুলে নেয়া, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা –এ সবই সবাই দেখেছে।’
এই ঘটনায় পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন বা পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার পর গত সেপ্টেম্বরের ঘটনাটি আবার সামনে এসেছে।
গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ
গত ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় হাঙ্গামার পর দিন হাসপাতাল মারা যান হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা। অভিযোগ উঠেছে, মাদ্রাসা ছাত্রদের একাংশ সেদিন শফীর কক্ষে ভাঙচুর করেছে, তার সঙ্গে অসদারণ, গালাগাল করেছে, তিনি অসুস্থ হয়ে গেলে অক্সিজেনের নল ছিড়ে ফেলা হয়েছে, অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় গত ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের একটি আদালতে মামলা করেন শফীর শ্যালক মাইনুদ্দীন। এতে শফীকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়।
১২ এপ্রিল পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে আদালতে। এতে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ৪৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো না হলেও ‘অবহেলাজনিত নরহত্যার’ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআই এর একজন কর্মকর্তা।
মামলার বাদী মঈনুদ্দীন এই তদন্তে সন্তোষ জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। তবে বাবুনগরী এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, আল্লামা শফীর মৃত্যু হয়েছে আল্লাহর নির্দেশে। পিবিআই তদন্ত ডাহা মিথ্যা।
মতবিনিময়ে পবিত্র রমজান ও বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেশ ও গোটা বিশ্বের করোনামুক্তি কামনা করেন তথ্যমন্ত্রী।
ফখরুলের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া
করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে বিধিনিষেধের সমালোচনা করায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমালোচনা করেন হাছান।
তিনি বলেন, ‘জনগণকে মহামারির হাত থেকে রক্ষার জন্যই সরকার লকডাউনের ব্যবস্থা নিয়েছে। বিশ্বের দেশে দেশেও একই ব্যবস্থা।
‘কিন্তু দুঃখজনক, মির্জা ফখরুল সাহেবদের কথা শুনে মনে হয়, তারা চান, দেশে করোনা সংক্রমণ আরো ব্যাপক বৃদ্ধি পাক, প্রতিদিন দেশে শতশত মানুষের মৃত্যু হোক, তাহলে তাদের রাজনীতিতে সুবিধা হয়।’