প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা থাকাকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে একাধিকবার হত্যাচেষ্টায় নাম আসা জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের খালাত ভাইকে সভাপতি করে কৃষক লীগের কমিটি গঠন হয়েছে বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়।
এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলে সেখানে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এই কমিটি পুনর্গঠনের দাবিও উঠেছে।
গত ৪ এপ্রিল মুফতি হান্নানের খালাত ভাই মুন্সি মাহফুজ হাসানাত কামরুলকে সভাপতি করে গঠন করা হয় কৃষক লীগের ৭১ সদস্যের কোটালীপাড়া কমিটি।
এর পর মাহফুজ হান্নান নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে কমিটি বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন ক্ষমতাসীন দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা। পরে ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ২০০০ সালের ২১ জুলাই কোটালীপাড়ায় জনসভার আগে তার জনসভাস্থলের আশেপাশে ৭৬ কেজি ও ৪০ কেজি ওজনের দুটি বোমা পুঁতে রাখে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ।
স্থানীয় দোকানি বদিউজ্জামান সরদার পুঁতে রাখা বোমা ঘটনাচক্রে খুঁজে পেলে শুরু হয় তোলপাড়। সেনাবাহিনীর একটি দল বোমা দুটি উদ্ধার করে। পরে জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়।আরও পড়ুন: ৭৬ কেজি বোমায় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা: ১০ জঙ্গির প্রাণদণ্ড বহাল
এই ঘটনায় করা এক মামলায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ১০ জনের এবং আরেক মামলায় ২৩ মার্চ এই ১৪ আসামির মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে বিচারিক আদালত। তবে সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় মুফতি হান্নানের আগেই ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এই মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
এই রায় ঘোষণার কারণে দুই দশক আগে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা চেষ্টার ঘটনাটি এখনও তাজা গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে।
বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যাচেষ্টার আরও ঘটনায় মুফতি হান্নানের সম্পৃক্ততার তথ্য আছে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলাতেও মুফতি হান্নানের সম্পৃক্ততার প্রমাণ উঠে আসে তদন্তে। অভিযোগপত্রে তাকে আসামিও করা হয়। কিন্তু রায়ের আগেই তার ফাঁসি কার্যকর হয়ে যাওয়ায় এই মামলা থেকেও বাদ পড়ে তার নাম।
২০১৮ সালের অক্টোবর এই মামলার রায় আসে বিচারিক আদালত থেকে।
ঘটনা তদন্তে কমিটি
মুফতি হান্নানের স্বজন কৃষক লীগের কমিটিতে কীভাবে, সেটি তদন্তে ৯ এপ্রিল কমিটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোটালীপাড়ার নেতারা।আরও পুড়ন: যার জন্য সেদিন প্রাণে বাঁচেন শেখ হাসিনা
কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ আশরাফ আলীকে। অন্য সদস্যরা হলেন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি এম এ ওয়াদুদ, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ বিশ্বনাথ সরকার বিটু, সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী ও সদস্য সিরাজুল ইসলাম।
কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির নির্দেশে এই তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে লিখিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক শরীফ আশরাফ আলী বলেন, ‘তদন্তে যদি কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও যেসব অভিযোগ
মুফতি হান্নানের স্বজনকে কমিটিতে নেয়ার ঘটনায় করা সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মুন্সি মাহফুজ হাসানাত কামরুল একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি। তার আপন বড়ভাই মুন্সি সরাফত হোসেন কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশস্থলে ৭৬ কেজি বোমা: ১৪ আসামির মৃত্যুদণ্ড
কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেনের অভিযোগও করেছেন তারা।
তবে কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমানের দাবি, সাংগঠনিক নিয়ম মেনে কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষক লীগের নতুন কমিটি করা হয়েছে। এখানে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ সত্য নয়।
কী বলছেন মুন্সি কামরুল
যাকে নিয়ে বিতর্ক, সেই মুন্সি মাহফুজ হাসনাত কামরুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জঙ্গি নেতা হান্নান মুন্সি আমার খালাত ভাই। তবে তারা স্বাধীনতাবিরোধী। তাই তাদের সঙ্গে আমাদের ৫০ বছর ধরে কোনো সম্পর্ক নেই। আমি ঢাকায় ছাত্রলীগ, যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম।’
পরিবারের বিএনপি সম্পৃক্ততার অভিযোগ খণ্ডন করে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা মুন্সি আবুল কাসেম আওয়ামী লীগ নেতা ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। আমার ভাই মুন্সি এবাদুল ইসলাম উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক ছিলেন। বড়ভাই মুন্সি সরাফত হোসেন কোনো দিন বিএনপি করেননি।’