ফরিদপুরের সালথায় তাণ্ডবের ঘটনায় ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ।
সালথায় গুজব ছড়িয়ে সরকারি বিভিন্ন অফিসে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের স্থল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার তিনি সালথায় যান। দুপুরে সালথা উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। পরে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ বিভিন্ন অফিস ও সরকারি বাসভবন ঘুরে দেখেন তারা।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান এমপি ও মো. আব্দুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি ও আফম বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি ও এসএম কামাল এবং দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার দীলিপ বড়ুয়া।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। ছবি: নিউজবাংলা
সমাবেশে হেফাজতে ইসলামকে দেশের নব্য রাজাকার উল্লেখ করে হানিফ বলেন, ‘সালথায় তাণ্ডবের ঘটনায় হেফাজতের সাথে তাদের দোসর বিএনপি জামায়াতের লোকেরা জড়িত। এ দেশকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা এ হামলা চালিয়েছে।’
সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফারুক খান বলেন, ‘এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে। আমরা প্রশাসনকে বলেছি, ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের চিহ্নিত করুন।
‘নিরীহ কাউকে যেন হয়রানি করা না হয়। আর জড়িতদের মধ্যে যদি আওয়ামী লীগের কেউ থাকে, তাকেও যেন রেহাই দেয়া না হয়।’
আব্দুর রহমান অভিযোগ করেন, স্থানীয় হেফাজত নেতা মাওলানা আকরাম হোসেন বিএনপি জামায়াতের স্বার্থরক্ষার জন্যই এ হামলার নেতৃত্ব দেন।
আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘যারা দেশকে অশান্ত করতে চাইছে তারা স্বাধীনতা বিরোধী। তাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না।’
লকডাউন কার্যকর করার চেষ্টায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয়দের বাকবিতণ্ডাকে কেন্দ্র করে সোমবার রাত ৮টা থেকে তিন ঘণ্টা রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে ফরিদপুরের সালথা উপজেলা।
ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা বাজারে চা পান করে ওই ইউনিয়নের নটাখোলা গ্রামের মো. জাকির হোসেন মোল্যা বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় সেখানে লকডাউনের পরিস্থিতি পরিদর্শনে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি উপস্থিত হন।
জাকির হোসেন অভিযোগ করেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই সহকারী কমিশনারের গাড়ি থেকে নেমে এক ব্যক্তি তার কোমরে সজোরে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন।
পরে বিভিন্ন ইউনিয়নে মোবাইলে যোগাযোগ করে ‘পুলিশের গুলিতে দুইজন নিহত হয়েছে’ এ-জাতীয় গুজব ছড়িয়ে সালথায় লোক জড়ো করা হয়। সন্ধ্যার পর হাজার হাজার জনতা থানা ও উপজেলা কমপ্লেক্স ঘেরাও করে। একপর্যায়ে তারা উপজেলা কমপ্লেক্সের প্রধান ফটক ও থানার ফটকের সামনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বিক্ষুব্ধ জনতা পরে উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
ইউএনওর গাড়ি ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়।
ফরিদপুর, ভাঙ্গা ও পার্শ্ববর্তী থানার অতিরিক্ত পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র্যাব গিয়ে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৮ সদস্যসহ আহত হয় ২০ জন। আহতদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জুবায়ের হোসেন ও মিরান মোল্যা নামে দুই যুবকের মৃত্যু হয়।