হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের রিসোর্ট-কাণ্ডের পর কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
বুধবার সকালে হেফাজতের কর্মীদের ভেঙে দেয়া আওয়ামী লীগ অফিস ও যুবলীগ নেতার বাড়ি পরিদর্শন করবেন ক্ষমতাসীন দলের পাঁচ নেতা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এলাকা পরিদর্শনে আসবেন বলে তাদের জানানো হয়েছে।
গত শনিবার মামুনুল হক এক নারীকে নিয়ে সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে গিয়ে অবরুদ্ধ হন। সে সময় স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা ফেসবুকে লাইভ করলে তোলপাড় হয়।
মামুনুল সে সময় যেসব তথ্য দিয়েছেন, পরে তার বেশির ভাগের সত্যতা মেলেনি।
মামুনুলকে ছিনিয়ে নেয়ার আগে ও পরে রিসোর্ট, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান হেফাজত কর্মীরা
স্থানীয় লোকজনের জেরার মুখে সঙ্গীনিকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে বলেন তার নাম আমেনা তাইয়্যেবা। দাবি করেন, তার শ্বশুরের নাম জাহিদুল ইসলাম, শ্বশুরবাড়ি খুলনায়।
তবে সেই নারী পরে জানান তার নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা, বাবার নাম অলিয়র রহমান, গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়।
এই ঘটনার পরে ফাঁস হওয়া বিভিন্ন টেলিফোনালাপে মামুনুলের বিয়ের দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার চার সন্তানের জননী স্ত্রী ওই দিন সন্ধ্যায় ছেলেদের নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসা ছেড়ে যান। তিনি এখনও ফেরেননি।
এসব ঘটনায় মামুনুল যখন বেকায়দায় তখন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা মসজিদে মাইকিং করে জড়ো হয়ে একযোগে হামলা করেন রিসোর্টে। স্থাপনাটিতে ব্যাপক ভাঙচুর করে মামুনুলকে ছিনিয়ে নেয়ার পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে ব্যাপক গাড়ি ভাঙচুরও করেন।
এখানেই থেমে থাকেননি তারা। ক্ষমতাসীন দল ও তার সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় কার্যালয়েও হামলা হয়। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় সেগুলো। হামলা হয় স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বাড়িঘরে।
রিসোর্টে হামলা করে মামুনুলকে ছিনিয়ে নেয়ার পর হেফাজত কর্মীরা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ রনির বাসভবনে হামলা করেন এই দশা করে
সেদিন হেফাজতের এই সন্ত্রাসী মনোভাব দেখা গেছে সুনামগঞ্জের ছাতকে ও মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানেও। সেখানেও ক্ষমতাসীন দলের কার্ালয় আক্রান্ত হয়েছে।
পরে জাতীয় সংসদে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তিনি হেফাজতকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এসব ঘটনা ঘটতে থাকলে যদি তাদের দলের লোকজন কওমি মাদ্রাসায় আক্রমণ করে, তখন পরিস্থিতি তারা সামলাতে পারবে কি না।
এর আগেও হেফাজত কর্মীদের দ্বারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বাসভবন ও কার্যালয় আক্রান্ত হয়েছে। আর ক্ষমতাসীন দলের নেতারা হেফাজতের প্রতি সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, হেফাজতকে আর ছাড় দেয়া হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও বলেছেন, যারা অপকর্ম করেছে শাস্তি পেতে হবে সবাইকে। এরই মধ্যে ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের ঘটনায় মামুনুল হকসহ হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
সোনারগাঁ যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর গাড়িটিও ভেঙে দেয়
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই আরও বলেন, ‘বিনা উসকানিতে আমাদের দলের অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতার বাড়ি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশ কেন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়নি তা জানবেন কেন্দ্রীয় এই নেতারা।’