বায়তুল মোকাররমে পুলিশের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সংঘর্ষে দলটির নেতা-কর্মীদের সে দিনের অবস্থান, বর্তমান অবস্থান, ঘটনার সঙ্গে তারা কতটুকু জড়িত, কার কী ভূমিকা এসব বিষয়ে পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
২৬ মার্চের সংঘর্ষের ঘটনায় হেফাজত নেতা মামুনুল হককে হুকুমের আসামি করে তাকেসহ দলটির ১৭ নেতার নামে পল্টন থানায় সোমবার রাতে মামলা করেন যুবলীগ নেতা খন্দকার আরিফ-উজ-জামান।
মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল জোনের উপকমিশনার সৈয়দ নূরুল ইসলাম মামলাটির তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন।
ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে অপরাধীদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয়কে আমলে নেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্তা।
সৈয়দ নূরুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল রাতে মামলাটি রেকর্ড হয়েছে। এখন মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের পরিচয়, তাদের এখনকার অবস্থান এবং ২৬ তারিখ তারা কোথায় অবস্থান করছিলেন, এই ঘটনার সঙ্গে তারা কতটুকু জড়িত, কার ভূমিকা কী ছিল ইত্যাদি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হবে।’
বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের সময় কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। ফাইল ছবি
তিনি বলেন, ‘সবকিছু পর্যালোচনা করে যাদের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপের প্রমাণ মিলবে, তাদেরকেই গ্রেপ্তারসহ প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। মামলার এজাহারে যেসব আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজন হেফাজতে ইসলামের নেতা।
‘আমরা দেখব কারা ম্যাসাকার করেছে, কারা সাংঘর্ষিক অবস্থার নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদেরকে আমরা খুঁজে বের করব। তাদের কোনো রাজনৈতিক পদ আমরা বিবেচনায় নেব না। আমরা শুধু তার অপরাধের ধরন ও মাত্রা দেখব।’
বাদির মামলা করার কারণ জানতে চাইলে সৈয়দ নূরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন জনৈক ব্যবসায়ী মামলাটি করেছেন। এজাহারে তিনি ১৭ জন আসামির নাম উল্লেখ করেছেন ও অজ্ঞাতনামা অনেকের কথা বলেছেন।’
‘তার বক্তব্য অনুযায়ী ২৬ তারিখের ঘটনায় ছুঁড়ে মারা টাইলসের টুকরো ও ইট তার গায়ে লেগে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। তার সঙ্গে আরও অনেকেই আহত হয়েছেন। আহতদের পক্ষ থেকেই তিনি মামলাটি করেছেন। সাক্ষী যারা তারা সকলেই সেদিনের ঘটনায় আহত হয়েছেন।’
২৬ মার্চ হাটহাজারীতেও তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা। ফাইল ছবি
ডিসি নূরুল আরও বলেন, ‘বাদীর বর্ণনায় তিনি সেদিন বাইতুল মোকারম মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। নামাজ পড়তে গিয়ে তিনি আক্রমণের শিকার হন। সেখান থেকে তিনি পালাবার চেষ্টা করেন।
‘;তখন তার ওপর ইটপাটকেল ছুড়ে মারা হয়, লাঠিসোটা দিয়ে তাকে আঘাত করা হয় এবং তার সঙ্গে যারা ছিলেন সকলকেই আঘাত করা হয়।’
ডিসি জানান, মামলার এজাহারে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন বাদী। আহতরা এতোদিন হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়েছেন। তারা এখন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে আগ্রহ প্রকাশ করেন মামলার জন্য।
ভুক্তভোগী তার আইনি অধিকারের জায়গা থেকে মামলাটি দিয়েছেন, সে অনুযায়ী পুলিশ মামলাটি নিয়েছেন বলেও জানান।
ডিসি বলেন, ‘মামলায় পেনাল কোড ও বিস্ফোরক আইনের কয়েকটি ধারায় ১৭ জন আসামি আছে, আমরা এখন তদন্ত করে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’
সেদিন মোদিবিরোধীদের সঙ্গে সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল, তাই মামলার বাদীর কোন রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না জানতে চাইলে ডিসি নূরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যোগ দিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে সেদিন ঢাকায় উপস্থিত ছিলেন।
‘বিষয়টি সরকার সর্মথকরা সমর্থন করবেন এটাই স্বাভাবিক। যারা এর বিরোধিতা করেছেন তারা সরকারবিরোধী সেটা আপনারা ধরে নিতেই পারেন। যিনি মামলা করেছেন তার পরিচয় তিনি দিয়েছেন একজন ব্যবসায়ী। তার অন্য কোনো পরিচয় আছে কি না সেটা আমরা পরে জানতে পারব।’
মোদিবিরোদী বিক্ষোভের শুরুতে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। ফাইল ছবি
মানুনুল হক সেদিন বায়তুল মোকাররমে উপস্থিত ছিলেন কি না প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ নূরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সেটা আমরা নিশ্চিত নই, তদন্তের পর এর উত্তর পাওয়া যাবে।
‘ঘটনাস্থলে উপস্থিত যারা তারাই শুধু অপরাধী বিষয়টা তেমন নয়, অনেকে আড়ালে থেকেও বড় অপরাধের নেতৃত্ব দিতে পারে। আমরা সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই তদন্ত করব।’
২৬ মার্চ জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংর্ঘষে জড়ায় হেফাজতে ইসলাম ও সমমনা ইসলামী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
বায়তুল মোকাররমের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সেদিন চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানাসহ সরকারি বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। সেখানে পুলিশের গুলিতে মারা যায় চারজন।
একই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। সেখানে রেল স্টেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ডাক বাংলোয় আগুন ধরিয়ে দেয়। সেদিন একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
সংঘর্ষ হয় পরের দিনও। ২৮ মার্চ হরতাল দেয় হেফাজতে ইসলাম। সেদিন আবারও নেতাকর্মীরা ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কয়েকটি জেলায় সংঘর্ষ হয়। তিন দিনের সংঘর্ষে ১৬ জন মারা যায়।
তাণ্ডবের ঘটনায় কয়েকটি মামলা হলেও সেখানে হেফাজতে ইসলামের কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।