হেফাজত নেতা মামুনুল হককে জঘন্য ব্যক্তি আখ্যা দিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘রোম যখন পুড়ছিল সম্রাট নিরো বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। বাংলাদেশ পুড়ছে, ব্রাক্ষণবাড়িয়া পুড়ছে আর উনি ফুর্তি করতে গিয়েছেন।’
সোমবার ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাফরুল্লাহ এই মন্তব্য করেন। হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘটিত সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরজমিন পরিদর্শনের পর তিনি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
‘নিশ্চিয়ই আমরা হেফাজতকে সমর্থন করি না’ উল্লেখ করে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘মানুনুল হকের মতো একটা জঘন্য ব্যক্তি, উনি যে সব কথাবার্তা বলেন….। এদেশ উনার বাবা করেছেন? আমরা করেছি। আমরা এ দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছি।’
তাদেরকে (হেফাজত) সরকারের এত পীরিতের কারণটা কী, এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘তাদের একজনের বিরুদ্ধেও মামলা হচ্ছে না। আইজি সাহেব খুব সুন্দর কথা বলেন, কিন্তু আসল জায়গায় হাত দিতে ভয় পান।’
হেফাজতের আদর্শ ও রাজনীতি কোনোটাতেই সমর্থন করেন না উল্লেখ করেন তিনি বলেন, তবে তাদেরও মিটিং-মিছিল করার অধিকার আছে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়া এলাকার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসা থেকে কয়েক হাজার ছাত্রের মিছিল বের হয়। তারা শহরের কেন্দ্রস্থল বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে গিয়ে হামলে পড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে। সেটি ভেঙে আগুন দেয়ার পাশাপাশি তারা আগুন দেয় শহরের রেলস্টেশন, আনসার ক্যাম্প, মৎস্য অধিদপ্তরে।
হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়েও। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে একজন নিহত হয়।
পরদিন মহাসড়ক অবরোধ করে পুলিশের ওপর হামলে পড়ে মাদ্রাসাছাত্ররা। তখন পুলিশ গুলি চালালে প্রাণ হারায় পাঁচজন।
নিহত ব্যক্তিদের নিজেদের কর্মী দাবি করে প্রতিবাদে ২৮ মার্চ হরতাল ডাকে হেফাজত। হরতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলে ব্যাপক তাণ্ডব। বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরাল ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সবগুলো স্থাপনায় ভাঙচুরের পাশাপাশি ধরিয়ে দেয়া হয় আগুন।
হামলা চলে পৌরসভা কার্যালয়, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়, শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, গণগ্রন্থাগার, সংগীতজ্ঞ আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিবিজড়িত ‘সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন’ ও মিলনায়তন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকারের অফিস, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি এবং সরাইলের খাটিহাতা হাইওয়ে থানায়।
ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় ওই তাণ্ডব সম্পর্কে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘হেফাজত নিশ্চিত ছিল সরকার তাদের বাধা দেবে না। তারা সরকারের লোক। এবং এর প্রমাণ আমরা অতীতেও দেখেছি। তারা মিটিং মিছিল করলে তাদের সরকারের পুলিশ বাহিনী বাধা দেয় না। কিন্তু অন্য কোনো রাজনৈতিক দল মিটিং মিছিল করলে তাদের ওপর পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় বিদেশি এজেন্ট
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত ডা. জাফরুল্লাহ সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় বিদেশি এজেন্ট জড়িত থাকতে পারে। কারণ এটা সাধারণ মানুষের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব না। ঘটনাটি পরিষ্কার করা দরকার। তবে বিক্ষোভের মধ্যে হেফাজতের কয়েকজন জড়িত থাকতে পারে। তাদেরও বিচার হওয়া উচিত।’
সংবাদ সম্মেলনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় আমাদের দাবি হলো- যারা নিহত ও আহত হয়েছেন, তাদের তালিকা প্রকাশ; ওই ঘটনায় যারা প্রকৃত দায়ী তাদের খুঁজে বের করা, ওই ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত ও বিচার; অজ্ঞতনামা যাদের নামে মামলা করা হয়েছে, তাদের হয়রানি বন্ধ করে সুনির্দিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়াসহ অনেকে।