নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রিসোর্টকাণ্ডের পর মামুনুল হককে হেনস্থার অভিযোগ এনে প্রতিবাদে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ‘লা জবাব’ হয়ে গেলেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে হেফাজত নেতারা দাবি করতে থাকেন তাদের যুগ্ম মহাসচিব ষড়যন্ত্রের শিকার। পরে সাংবাদিকরা তার কথিত দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে উঠা নানা প্রশ্ন ও অনলাইনে ফাঁস হওয়া নানা কথোপকথন নিয়ে প্রশ্ন রাখেন। কিন্তু এর কোনো জবাব দিতে পারেননি তারা।
যাকে নিয়ে এতো আলোচনা সমালোচনা সেই মামুনুল হক সভায় উপস্থিত ছিলেন না। সভায় মূল বক্তব্য প্রদান করেন হেফাজতে ইসলামের সহকারী মহাসচিব সাখাওয়াত হোসেন রাজী। তার বক্তব্যের পর সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতে থাকেন।
সোনারগাঁওয়ের একটি রিসোর্টে হেফাজত নেতা মামুনুল হককে নারীসহ অবরুদ্ধ করে স্থানীয়রা
শনিবার মামুনুল নারায়ণগঞ্জের রয়্যাল রিসোর্টে মামুমুল নিয়ে যান জান্নাত আরা ঝর্ণা নামে এক নারীকে। যদিও তার পরিচয় হিসেবে লেখেন আমেনা তাইয়্যেবা।
মামুনুল দাবি করেন, তিনি ওই মেয়েকে দুই বছর আগে বিয়ে করেছেন। তার শ্বশুরের নাম জাহিদুল ইসলাম, বাড়ি খুলনায়।
পরে সেই মেয়ে নিজের নাম জানিয়ে বলেছেন, তার বাবার নাম ওলিয়র রহমান, বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার কামারগাঁওয়ে।
এর মধ্যে বেশ মোবাইল ফোনে কথোপকথনের বেশ কয়েকটি ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে, যাতে মামুনুলের বিয়ের দাবি নিয়ে প্রশ্ন উঠে।
এর একটিতে বোঝা যায় মামুনুল তার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, সেই নারী তার পরিচিত শহীদুল ইসলামের স্ত্রী। ঘটনার কারণে চাপে পড়ে স্ত্রী বলতে বাধ্য হয়েছেন।
পরে আরেকটি কথোপকথন ফাঁস হয়, যা মামুনুলের সঙ্গে তার রিসোর্টের সঙ্গীনির মধ্যকার বলে প্রতীয়মান হয়। সেখানে সেই নারী জানান, তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার মায়ের একটি বন্ধ মোবাইল নম্বর দিয়েছেন। আর অন্য একজন যখন তাকে কোথায় বিয়ে হয়েছে জিজ্ঞেস করেছে, তখন তিনি বলেছেন, এটা জানেন না। মামুনুলের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।
আরও একটি কথোপকথনে বোঝা যায় মামুনুলের বোন কথা বলেছেন হেফাজত নেতার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর সঙ্গে। তিনি তাকে বুঝিয়েছেন, কেউ যদি তাকে ফোন করে, তাহলে তিনি যেন বলেন, তিনি বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন এবং তার শাশুড়ি এই বিয়ের আয়োজন করেছেন।
স্থানীয়রা অবরুদ্ধ করার পর পুলিশ গিয়ে কথা বলে মামুনুল হকের সঙ্গে
এরপর মামুনুল ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, তিনি বিয়ে করেছেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রীকে। পারিবারিকভাবেই এই বিয়ে হয়েছে।
পরদিন ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি একে একটি মানবিক বিয়ে উল্লেখ করে লেখেন, সেই নারীর সঙ্গে তার স্বামীর ছাড়াছাড়ির আগে তিনি সংসার ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন। ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর মেয়েটি দুর্দশায় পড়ে যায়। সে সময় তিনি বিয়ে করে নিয়েছেন তাকে।
হেফাজতের সহকারী মহাসচিব সাখাওয়াত হোসেন রাজী কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান, মামুনুল হক কোথায় ও কবে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন।
জবাব আসে, ‘এ বিষয়টি তার ব্যক্তিগত বিষয়। যার উত্তর দেবেন মামুনুল হক।’
মামুনুল হকের বিষয়ে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে কোন তদন্ত কমিটি করা হবে কি না সেই প্রশ্নেরও কোন উত্তর দেননি তিনি।
রাজী বলেন, ‘আমরা নারীর সম্মানে বিশ্বাসী। একজন নারীর ওপরে অপবাদ আনা হচ্ছে।’
হেফাজতের হরতালে নারী সাংবাদিকদের ওপর হামলার অতীতের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হেফাজতের পক্ষ থেকে এমন কোনো ঘটনা আমরা ঘটাইনি।’
মামুনুল হকের সঙ্গে তার স্ত্রীর যে ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে সে বিষয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি এগুলো কাট-ছাঁট করা যায়। এগুলো আইনবিরোধী। এ জন্য আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ব্যবস্থা নেব।’
মামুনুল হক সোনারগাঁও রয়্যাল রিসোর্ট থেকে বের হয়ে তার প্রকৃত স্ত্রীর কাছে ফোন দিয়েছিলেন কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে কোন উত্তর দেননি এই নেতা।
পরে একজন গণমাধ্যম কর্মী প্রশ্ন রাখেন, ‘আপনারা বলছেন মামুনুল হক দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। তাহলে তিনি প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নিয়েছেন কি না।’
সেই প্রশ্নেরও কোন উত্তর দেননি ওই হেফাজত নেতা। বরং দ্রুত মোনাজাত করে সভা শেষ করেন।
এর আগে প্রতিবাদ সভায় তিনি বলেন, ‘একজন সতী-সাবিত্রী নারীর ওপরে অপবাদ আনা হচ্ছে। এ জন্য আল্লাহর গজব পড়বে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, মামুনুল যাকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী বলেছেন, তিনি একটি বিউটি পার্লারের কর্মী। তাকে নিয়ে ফুর্তি করতে গিয়েছিলেন হেফাজত নেতা।
এই বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন হেফাজত নেতা। বলেন, ‘কী করে জাতীয় সংসদে এক নারীর চরিত্র নিয়ে এভাবে কথা বলা হয়! একজন নারীর চরিত্রে কলঙ্ক লাগানোর চেষ্টা করা করা হয়েছে। যার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই।‘
তিনি বলেন, ‘মামুনুল হক সম্পূর্ণ শরিয়া সম্পন্ন উপায়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। এর পরে মাওলানা মামুনুল হক সাহেবের কাছে তথ্য উপাত্ত চাওয়া যেতে পারে। কিন্তু তাদের হেনস্তা করার কোনো অধিকার কারও নেই।’
শনিবার রয়্যাল রিসোর্টের ঘটনাপ্রবাহের বিষয়ে এই হেফাজত নেতা বলেন, ‘কালকে মামুনুল হকের ওপর যে নেক্কারজনক হামলা করেছে সরকারদলীয় অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। আমরা যদি চাইতাম কালকেই কমপক্ষে পাঁচ লাখ লোকের জমায়েত হতো।’
হেফাজতের ইসলামের সঙ্গে কেউ যদি সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তার গদি টিকবে না বলেও সরকারকে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।