২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর পরিস্থিতি ‘চমৎকারভাবে’ মোকাবিলা করলেও হেফাজতে ইসলামের সাম্প্রতিক তাণ্ডব পুলিশ কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি- জাতীয় সংসদে সে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
পুলিশের শক্তি কমে গেছে নাকি অন্য কোথাও সমস্যা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে প্রশ্নও রেখেছেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী।
রোববার সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের সমাপনী দিনে বক্তব্য রাখছিলেন ইনু। এ সময় তিনি মূলত কথা বলেন গত ২৬ ও ২৮ মার্চ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের নানা প্রান্তে হেফাজত কর্মীদের সহিংসতা নিয়ে।
বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডব ছিল নজিরবিহীন। সেখানে বহু সরকারি বেসরকারি স্থাপনা বলতে গেল তছনছ করে দিয়েছে কওমি মাদ্রাসা থেকে আসা হেফাজত কর্মীরা। ভাঙচুর চালানো হয়েছে জেলা শহরে মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতিচিহ্নে।
বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্ালয়-কোনো কিছুই বাদ যায়নি হেফাজত কর্মীদের তাণ্ডব থেকে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভাঙচুরের পাশাপাশি পেট্রল ঢেলে আগুন দেয়া হয়েছে সেগুলোতে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে স্থানীয় ভূমি অফিস, রেল স্টেশন।
২৬ মার্চ জেলা শহরে তাণ্ডবের দিন পুলিশ গুলি চালিয়েছে তখন যখন হেফাজত কর্মীরা আক্রমণ করেছে পুলিশ সুপার কার্ালয়। ২৮ মার্চের হরতালেও তারা গুলি করেছে পুলিশ লাইনস আক্রমণের সময়। বাকি সময় শহর যখন জ্বলছিল, তখন পুলিশ ছিল নিরব ভূমিকায়।
বরং হেফাজত কর্মীরা যখন শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল, তখন স্থানীয় থানা থেকে মাইকিং করা হয়েছে। হেফাজত কর্মীদের মিছিলে কোনো বাধা দেয়া হবে না, এমন ঘোষণা দেয়া হয়েছে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পক্ষ থেকে।
২৬ মার্চ চট্টগ্রামের হাটহাজারীতেও পুলিশ তখন প্রতিহত করেছে, যখন থানা আক্রান্ত হয়েছে। এর আগে ডাকবাংলো থেকে বের করে এনে বের করে এনে এক সহকারী পুলিশ কমিশনারকে পিটিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় ফেলে রেখে গেছে হেফাজত কর্মীরা। এসিল্যান্ড অফিসও তছনছ করেছে।
পুলিশ ও প্রশাসন কেন নিরব ছিল, সে প্রশ্ন তুলেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
ইনু বলেন, ‘স্বরাষ্টমন্ত্রী একটি বয়ান দিয়েছেন, কিন্তু আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে যাচ্ছি, যে হেফাজতের তাণ্ডবের মুখে পুলিশ প্রশাসনের অসহায়ত্বটা প্রকাশ পেয়েছে। এই দুর্বলতা কেন? কিসের সমস্যা?
‘পুলিশের গাড়িতে আগুন, আসামি ছিনতাই…পুলিশ কি তার নৈতিক বল হারিয়ে ফেলেছে? পুলিশের কি জনবল কম হয়ে গিয়েছে?’
শাপলা চত্বরের প্রসঙ্গ টেনে সে সময়ের মন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো দেখেছি পুলিশকে, চমৎকারভাবে শাপলা চত্বর মোকাবিলা করতে। সুতরাং পুলিশ কেন অসহায় এই ব্যাপারে আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি সংসদ নেতার।’
এর আগে হেফাজতের তাণ্ডব নিয়ে সংসদে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, হেফাজতের তাণ্ডব পরিকল্পিত এবং এর পেছনে উদ্দেশ্য আছে।
যারা এসব ঘটনা ঘটিয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরায় তারা ধরা পড়েছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, জড়িত সবাইকে ধরা হবে।
ইনুও মনে করেন শাল্লার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাড়িয়ার ঘটনা পরিকল্পিত। নাইলে এরকম তাণ্ডব করা সম্ভব না।
তিনি বলেন, ‘আমি আহ্বান জানাব স্বরাষ্টমন্ত্রীকে, আপনি রাখঢাক না করে মামুনুর হকের নাম উচ্চারণ করেন বলিষ্ঠভাবে। বাবুনগরীদের, উসকানিদাতাদের গ্রেপ্তার করেন, কারাগারে নিক্ষেপ করেন। জঙ্গি যেভাবে দমন করেছেন সফলভাবে, সেইভাবে আপনার দক্ষতা আছে, যোগ্যতা আছে…আপনি দমন করেন। আপনি দমন করেন, রাষ্ট্রকে নিরাপদ করেন।’
জাসদ নেতা বলেন, ‘মামুনুল হক বায়তুল মোকারমের দক্ষিণ গেটে প্রকাশ্যে হুংকার দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। বাবুনগরী চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে হুংকার দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এর জন্য দূরবীণ লাগিয়ে মামুনুল হক আর বাবুনগরীকে খোঁজা লাগবে না। ডিজিটাল সময়ে প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে এটার ভাষণ আছে। সুতরাং কেন মামুনুল হক ও বাবুনগরীকে এই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য প্রধান উসকানিদাতা হিসেবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না?
‘এটা আমি মাননীয় স্পিকার আপনার মাধ্যমে স্বরাষ্টমন্ত্রীর কাছে আহ্বান করছি। আমি মনে করি এই অপশক্তিকে ছাড় দেয়া উচিত নয়।’
ইনু বলেন, ‘আমি মনে করি এটাকে শক্তভাবে দমন করা ছাড়া আর কোনো পথ নাই। এখানে ছাড় দেয়া উচিত না। মনে রাখবেন, দুধ কলা দিয়ে গোখরো সাপ পুষতে নাই, গোখরো সাপ কিন্তু দিনের শেষে যে পুষবে তাকেই ছোবল মারবে।’
হেফাজতের হরতাল বিএনপির সমর্থন ঘোষণা নিয়েও কথা বলেন ইনু। বলেন, ‘বিএনপি আজকে সরাসরি হেফাজতকে সমর্থন দিচ্ছে। অর্থাৎ হেফাজত ইসলাম পাকিস্তানের রাজাকারের ও পাকিস্তানপন্থার মুখোশে খেলছে, যারা বিএনপির ভাড়াটে খেলোয়াড়। এটা রাষ্ট্রের জন্য হুমকি।’