পাল্টাপাল্টি জরুরি সম্মেলন ডেকেছে বামপন্থি ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের দুই অংশ।
বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ওপর অনাস্থা এনে আগামী ১২ এপ্রিল জরুরি সম্মেলন করবে কেন্দ্রীয় কমিটির একাংশ। অন্যদিকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বাধীন অংশ আগামী ৪ জুন জরুরি সম্মেলন আহ্বান করেছে।
পাল্টা-পাল্টি জরুরি সম্মেলন কেন
সবশেষ গত বছরের ১৯ নভেম্বর ৪০তম জাতীয় সম্মেলনে ফয়েজ উল্লাহকে সভাপতি ও দীপক শীলকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্র ইউনিয়নের ৪১ সদস্যের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটি গঠনের পর থেকেই সংগঠনের একাংশের দাবি, ওই সম্মেলনে একাধিক গঠনতান্ত্রিক ব্যত্যয় ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক চর্চা বিনষ্ট করা হয়েছে।
তার পরিপ্রেক্ষিতে গত ডিসেম্বরে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ রিকুইজিশন জাতীয় সম্মেলনের দাবি জানায় সভাপতির কাছে। তাদের এই দাবির পক্ষে সই করেন ৪০তম জাতীয় সম্মেলনে অংশ নেয়া প্রতিনিধিদের অর্ধেক সদস্য।
ছাত্র ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এই দাবি উত্থাপনের ২১ দিনের মধ্যে রিকুইজিশন জাতীয় সম্মেলন ডাকতে সভাপতি বাধ্য।
তবে সভাপতি দাবি উপেক্ষা করেছেন এবং ২১ দিন পার হওয়ার পরও রিকুইজিশন জাতীয় সম্মেলন না ডেকে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ এই অংশের। তখন থেকেই দুই অংশের মধ্যে বিরোধ বাড়তে থাকে। এই বিরোধ ও দ্বন্দ্ব নিরসনে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও তাতে কাজ হয়নি।
বিরোধের জেরে ‘শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা পরিপন্থি’ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকসহ আটজনকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় কমিটির এই অংশ।
ছাত্র ইউনিয়ন যে বামপন্থি দলের গণসংগঠন হিসেবে পরিচিত, সেই বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) শীর্ষ নেতারা এই বিরোধ মেটাতে পদক্ষেপ নেন। তাদের হস্তক্ষেপে দুই পক্ষই ১৪ এপ্রিলের আগে জরুরি সম্মেলন করতে রাজি হয়।
কিন্তু কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক টালবাহানা করে তা পেছাতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ একাংশের।
এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের নেতা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক মিখা পেরেগু বলেন, ‘আমরা রিকুইজিশন কাউন্সিলের আবেদন করেছিলাম। কিন্তু গঠনতন্ত্র ব্যত্যয় করে কেন্দ্রীয় কমিটি সেটা খারিজ করে দিয়েছে। তারপরও আমরা ছাত্র ইউনিয়নের ঐক্যের স্বার্থে বসেছি, একসঙ্গে দুইটা মিটিং করেছি। সেই মিটিং থেকে জরুরি সম্মেলন ডাকার কথা বলা হয়েছে।
‘জরুরি সম্মেলন নিয়ে আমাদের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, যদি সংগঠনে জরুরি অবস্থা তৈরি হয়, তবে ১৫ দিনের নোটিসে সম্মেলন করতে হবে। আমাদের সংগঠন জরুরি অবস্থায় আছে। কাজেই তারা (অপরাংশ) দুই মাস পরে জরুরি সম্মেলন ডাকতে পারে না। দুই মাস সময় নিয়ে তো একটা পূর্ণাঙ্গ সম্মেলনই করা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গঠনতন্ত্রের এতগুলো ব্যত্যয় যেহেতু ঘটেছে, আমরা যারা রিকুইজিশন কাউন্সিলের জন্য আবেদন করেছিলাম তাদের ওপরই কিন্তু দায় পড়েছে সংগঠনের গঠনতন্ত্র রক্ষার।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘পাল্টাপাল্টি সম্মেলনের কোনো সুযোগ নেই। আমাদের বেশ কয়েকজন সহযোদ্ধা সম্মেলনকেন্দ্রিক কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা বলেছিলেন। এ নিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি একটা জরুরি সভা আহ্বান করে। সেই সভায় আমরা সিদ্ধান্ত নিই, ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো সমাধানের জন্য আমরা একটা জরুরি কাউন্সিল আহ্বান করব।
‘দুই দিনব্যাপী এই সভা হয়েছিল অনলাইনে। প্রথম দিন মিটিংয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি, রাত গভীর হয়ে যাওয়ায় আমি সভা স্থগিত করতে বলেছি। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কথা বলে তারিখ জানিয়ে দেবেন। কিন্তু পরের দিন তারা নিজেরা বসে একটা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে। এটা তারা করতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমত যদি ছাত্র ইউনিয়নের কাউন্সিল বা সম্মেলন ডাকতে হয়, সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটি সেটা নির্ধারণ করে থাকে। কেন্দ্রীয় কমিটি পরে সেটা জাতীয় পরিষদ সভায় পাস করিয়ে সম্মেলন বা কাউন্সিল দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের ডাকা ১২ এপ্রিলের সম্মেলন সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক। কারণ এটা ছাত্র ইউনিয়নের কোনো ফোরামে সিদ্ধান্ত হয়নি।’
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতির এই বক্তব্যের জের ধরে সহসাধারণ সম্পাদক মিখা পেরেগু বলেন, ‘এটা আলাদা কোনো সিদ্ধান্ত নয়, সেই জরুরি মিটিংয়ে আমরাও ছিলাম। কিন্তু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সম্মেলনের কোনো তারিখ সেদিন দেন নাই। তাই আমরা কেন্দ্রীয় সেই মিটিংয়ের প্রতিনিধিরাই এই তারিখ নির্ধারণ করেছি। সুতরাং এটাই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত।