স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজন কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও হরতালের নামে দেশজুড়ে তাণ্ডব চালানো হেফাজতে ইসলামকে হুঁশিয়ার করেছেন সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য জানিয়েছেন, ধর্মভিত্তিক সংগঠনটির কার্যক্রম অনেক সহ্য করেছেন, আর নয়।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শনিবার একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে হেফাজত বিষয়ে কথা বলেন শেখ সেলিম। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আরও কঠোর হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘স্বাধীনতার দিনে তারাই তাণ্ডব চালায়, যারা এদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারে না। তাদের তো এদেশে থাকার কোনো অধিকার নাই। হেফাজতে ইসলাম, আসলে তারা ইসলামের শত্রু।’
শেখ সেলিম বলেন, ‘যারা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এ ধরনের জঘন্য কাজ করে তারা বাংলাদেশের শত্রু। স্বাধীনতার শত্রু, জনগণের শত্রু, তারা ইসলামেরও শত্রু। তাদের মনে রাখতে হবে এটা তালেবান রাষ্ট্র নয়, এটা পাকিস্তান রাষ্ট্র নয়, সন্ত্রাসী জঙ্গিদের বাংলার মাটিতে কোনো স্থান নেই।
‘সরকারকে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাধীন দেশে এভাবে চলতে পারে না। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর জন্য আমরা অনেক কিছু সহ্য করে গেছি। আর কোনো কিছু সহ্য করা হবে না।’
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব জন্মশত বর্ষ উপলক্ষে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমণের দিন ২৬ মার্চ জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ মিছিলে তাণ্ডব চালায় হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। একই রকম তাণ্ডব চালানো হয় চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। পরের দিন দেশজুড়ে হরতাল ডাকে সংগঠনটি। সহিংসতা হয় এদিনও। কিছু কিছু জায়গায় সহিংতা চলে এর পরের দিনও।
উত্তালের ওই তিনদিনে শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই নিহত হন ১১ জন। চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে নিহত হয় অন্তত চারজন। অভিযোগ উঠেছে, বিক্ষোভ, হরতাল, মিছিলে সরকারি অফিস, দপ্তর, মুক্তিযুদ্ধ স্থাপনায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে হেফাজতের কর্মীরা।
শেখ সেলিম বলেন, ‘যারা স্বাধীনতা মেনে নিতে পারে নাই, সেই শক্তি আমাদের এই সুন্দর অনুষ্ঠানকে কলঙ্কিত করার জন্য বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারীতে তাণ্ডব চালায়। তারা থানায় আক্রমণ করে, পুলিশের ওপর আক্রমণ করে, পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়, ভূমি অফিস এবং বিভিন্ন স্থাপনা তারা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি যারা বিন্দুমাত্র বিশ্বাস রাখে তারা কোনোদিন এই জঘন্য কাজ করতে পারে না।’
সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম
গোপালগঞ্জ-২ আসন থেকে সাতবার নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘গত ২৭ মার্চ তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, এসপি অফিস, থানায় আগুন দেয়, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল পর্যন্ত তারা ভাঙচুর করে এবং আগুন দেয়ার চেষ্টা করে…।
‘এছাড়া সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদ, বসুন্ধরা এবং ৩০০ ফিট রাস্তায় ওখানে স্থাপনায় আগুন দেয় ও গাড়ি ভাঙচুর করে। হেফাজতে ইসলাম আসলে ইসলাম বিরোধী। ইসলাম কেবল হেফাজত করতে পারে আল্লাহ, জঙ্গিদের দ্বারা ইসলাম হেফাজত হতে পারে না।’
ক্ষমতাসীন দলের এই প্রবীণ রাজনীতিকের ভাষায়, এই জঙ্গিরা তলোয়ার নিয়ে যেভাবে ঘোড়ার ওপর উঠে পেছনে শত শত জঙ্গিদের এবং সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষ হত্যা করার জন্য এবং স্থাপনা ধ্বংস করার জন্য তাণ্ডব চালিয়েছিল। তাদের ছবি দেখলে মনে হয় প্রাচীনকালের কোন যুদ্ধে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘তাদের মনে রাখতে হবে এটা তালেবান রাষ্ট্র নয়, এটা পাকিস্তান রাষ্ট্র নয়, সন্ত্রাসী জঙ্গিদের বাংলার মাটিতে কোনো স্থান নেই। সরকারকে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাধীন দেশে এভাবে চলতে পারে না। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর জন্য আমরা অনেক কিছু সহ্য করে গেছি আর কোন কিছু সহ্য করা হবে না।’
শেখ সেলিম জানান, ২৭ মার্চ বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। তারা শুধু আক্রমণ করে নাই ১০ জন পুলিশকে বোমা মেরে আহত করেছে। পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় আক্রমণ করে পুড়িয়ে দিয়েছে বিএনপি-হেফাজতের সমর্থকেরা।
‘তারা সাম্প্রদায়িকতার কথা বলে ধর্মভীরু মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে। এরা রাষ্ট্রবিরোধী, ইসলামবিরোধী। এরা সন্ত্রাসী, এরা জঙ্গি, রাষ্ট্রের শত্রু, মানবতার শত্রু, দেশের শত্রু। এদেরকে কোনো ছাড় দেয়া যেতে পারে না। বাংলাদেশ কিছু জঙ্গি, সন্ত্রাসী, স্বাধীনতাবিরোধীরা আছে তারা পাকিস্তানে নিয়াজি ও তালেবানের অনুসারী এরা স্লোগান দিয়েছে আমরা সবাই তালেবান বাংলা হবে আফগান। হেফাজতের নামে যারা জঙ্গি সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্ত হয় এবং বিএনপি-জামায়াত তাদের সহযোগী হিসেবে যারা ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে এবং তারা কোনভাবেই ইসলামকে হেফাজত করতে পারে না, ইসলামকে হেফাজত করবে আল্লাহ।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘যারা বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের বাংলাদেশের ভাবমূর্তি, আমাদের অর্জন, গৌরব এটাকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দরকার হলে ট্রাইব্যুনাল করে অবিলম্বে তাদের বিচার করতে হবে। হেফাজতের জঙ্গিরা মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে যারা রাস্তায় মানুষকে হত্যা করে মানুষের বাড়িঘর আক্রমণ করে জ্বালিয়ে দেয়, স্থাপনা নষ্ট করে সেইসব মাদ্রাসা বন্ধ করে দিতে হবে।’
হেফাজতকে দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ সেলিম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে কঠোর হতে হবে। আপনার পেছনে ১৪ কোটি স্বাধীনতাকামী মানুষ আছে। এই অপশক্তিকে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে। যারা এখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতা মানে না যারা বাংলাদেশকে স্বীকার করতে পারছে না, তাদের বাংলাদেশে থাকার কোনো অধিকার নাই।’