বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) থেকে ভেঙে গঠিত হওয়া মার্কসপন্থি বাসদও আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে গেল। ফল হিসেবে আবির্ভুত হলো ‘বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন’ নামে নতুন আরও একটি বামপন্থি দল।
এই নিয়ে অনেক ধরে গুঞ্জন চললেও শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন দলের নাম ঘোষণা করলেন বাসদ (মার্কসপন্থি) থেকে ছিটকে যাওয়ারা।
সংবাদ সম্মেলনে ৩৭ জন সদস্য নিয়ে নতুন দলের নাম ঘোষণা করেন শুভ্রাংসু চক্রবর্তী। দলের সমন্বয়ক হিসেবেও আছেন তিনি নিজেই।
বাসদ (মার্কসপন্থি) ভেঙে নতুন দল গড়া প্রসঙ্গে শুভ্রাংশু জানান, ২০১৩ সালে বাসদ থেকে বেরিয়ে এসে কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর নেতৃত্বে বাসদ (মার্কসবাদী) গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু দল ঘোষণার কিছুদিন পরেই পুরানো দলের অনেক রাজনৈতিক সাংগঠনিক সমস্যা পুনরাবৃত্তি শুরু হয়।
তিনি বলেন, ‘অতীতের বাসদ রাজনীতির যথার্থ মূল্যায়ন এবং ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন ঐ দলটি পরিচালনার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সে পথে হাঁটেনি। বরং কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অযৌক্তিক, মনগড়া সিদ্ধান্ত মূল্যায়নের নামে দলের ওপর চাপিয়ে দেয়া হতো।
‘ফলে ভুল থেকে বের হয়ে আসা এবং পেটিবুর্জোয়া রাজনীতির সঙ্গে ছেদ ঘটানোর কোনো সম্ভাবনা থাকল না। মূল্যায়নের ভিত্তিতে আমরা বলেছিলাম, বাসদ (মার্কসবাদী) অতীতের পেটিবুর্জোয়া রাজনীতির সঙ্গে ছেদ ঘটাতে পারেনি। শ্রমিক শ্রেণির পার্টি পরিচালনার মূলনীতি গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতা ও নেতৃত্বের চর্চার ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে না।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাসদে (মার্কসপন্থি) সাধারণ সম্পাদকের স্বেচ্ছাচারিতা, সমালোচনা গ্রহণ না করে দ্বিমত পোষণকারীদের কোণঠাসা করা হতো। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রেও গণআন্দোলন, শ্রেণি সংগ্রামের উদ্যোগী না হয়ে গতানুগতিক কর্মসূচির মধ্যে দল গণ্ডিবদ্ধ হয়ে পড়ে দলের কার্যক্রম।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নির্ধারিত ফোরামের ১৬ নেতা কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী লিখিত বক্তব্যের ভিত্তিতে দলের কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন করে সংগ্রামের সূচনার আহ্বান জানান। কিন্তু সে আহ্বানে কর্ণপাত না করে কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তীসহ ১৬ জন নেতাকে বহিষ্কার করা হলে দল ভাঙনের মুখে পড়ে।
শুভ্রাংসু চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশে অনেক বামপন্থি রাজনৈতিক দল থাকলেও এর কোনোটাই সঠিক মার্কসবাদী বিপ্লবী দল হিসেবে গড়ে ওঠেনি। একটি বিপ্লবী দল গড়ে তোলার লক্ষ্যে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করছি। কমিউনিস্ট পার্টি পড়ার নীতিগত ও পদ্ধতিগত সংগ্রামের নানা দিক এবং অতীত রাজনীতির অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা কথা বলছি। এটি একটি পার্টি গঠন-প্রক্রিয়া।
“এ প্রক্রিয়াকে আরও মূর্ত করার জন্যে একটি নতুন নামকরণ এবং একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রদান করা প্রয়োজন মনে করেছি। সে প্রয়োজন থেকেই আমরা নতুন নাম ‘বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন’ ঘোষণা করছি। ইংরেজিতে এটি Communist Movement Of Bangladesh (CMB)।”
শুভ্রাংসু জানান, বিপ্লবী দলের অত্যাবশ্যকীয় শর্তাবলী পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন পার্টি গঠন প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হবে। পুঁজিবাদী শাষণমূলক ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের লক্ষ্যে কাজ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শ্রমিকশ্রেণির বিপ্লবী মতাদর্শ মার্কসবাদ-লেনিনবাদের ভিত্তিতে গণ-আন্দোলন, শ্রেণিসংগ্রাম এবং দল গড়ার নীতিগত ও পদ্ধতিগত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দল গঠন প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে।