হেফাজতে ইসলামের হরতালের দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া তাণ্ডবের সময় জেলা প্রেস ক্লাবে হামলার প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা হেফাজতের সংবাদ বর্জনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ধর্মভিত্তিক সংগঠনটি।
ঢাকায় এক সমাবেশে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেছেন, গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের সংবাদ বর্জন করলে কিছু যায় আসে না। তারা সামাজিকমাধ্যমে প্রচার চালাবেন।
হেফাজতের রোববারের হরতালে তাদের ওপর আক্রমণের অভিযোগ এনে শুক্রবার বায়তুল মোকাররমে প্রতিবাদ সমাবেশ করে সংগঠনটি।
এ সময় হেফাজতের সংবাদ বর্জনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গণমাধ্যমকর্মীদের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন মামুনুল। তার দাবি, গণমাধ্যম ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
রোববারের হরতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর আগুনের পাশাপাশি হামলা হয় স্থানীয় প্রেস ক্লাবেও।
এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার এক সমাবেশ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য হেফাজতে ইসলামসহ ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর সংবাদ বর্জনের ঘোষণা দেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব।
বিক্ষোভে বক্তব্য দিচ্ছেন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। ছবি: সাইফুল ইসলামএর জবাবে মামুনুল বলেন, ‘আপনাদের কাছে টেলিভিশনের পর্দা আছে, আমাদের কাছে সাড়ে ৩ লাখ মসজিদের মেম্বর আছে। আপনাদের কাছে যদি জাতীয় পত্রপত্রিকা থেকে থাকে, আমাদের কাছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রয়েছে। মিডিয়াকে বলব বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করেন।’
প্রয়োজনে মিডিয়াকে বয়কট করা হবে বলেও জানান মামুনুল। বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিকদের উপরে কেউ ভুল করে খারাপ আচরণ করে থাকতে পারে। কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা সেটার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছি। আমাদের কথা আপনাদের ভালো লাগল না। আপনারা হেফাজতে ইসলামকে বয়কট করলেন। মনে রাখবেন যদি ইসলামকে বয়কট করেন তো জনগণ মিডিয়াকে বয়কট করবে।’
সেদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাশাপাশি সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে। সেখানে গাড়ি ভাঙচুর ও যানবাহনে আগুনের সংবাদ সংগ্রহে গণমাধ্যমকর্মীরা গেলেও তেড়ে এসেছেন হেফাজতের কর্মীরা। সৌরভ নামে একজন সাংবাদিকের ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত হতে ‘কালমা’ বলতে বাধ্য করা হয়েছে।
বুধবার নারায়ণগঞ্জ গিয়ে মামুনুল হক এর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম গণমাধ্যম কর্মীদের সম্মান করে। তবে হেফাজতের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সাথে ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে অথবা চলাচলের পথে ভুল হতে পারে। কিন্তু হেফাজতের কোনো দায়িত্বশীল নেতা সাংবাদিকদের মারধর করেননি।’
হেফাজতের বিক্ষোভ ঘিরে পুলিশের সতর্ক অবস্থান। ছবি: সাইফুল ইসলামব্রাহ্মণবাড়িয়া তাণ্ডব নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার সমালোচনা করে স্থানীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে মামুনুল বলেন, ‘সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে পারেন না। শতবর্ষী বাংলাদেশের অহংকার জামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসায় যারা হামলা করল তাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে পারেন না। আপনারা পারেন হেফাজতে ইসলামের কল্পিত কাহিনি রচনা করতে।
‘মিডিয়াকর্মীদের বলব, আপনারা অনেক শক্তিশালী আমরা মানি। মিডিয়া শুধু বাংলাদেশে নয় সারা পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করে সেটাও মানি। আপনারা যতই প্রভাবশালী হোন, যতই শক্তিশালী হোন, যতই পরিবেশ-পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করেন, মনে রাখবেন আল্লাহর চেয়ে শক্তি আপনাদের বেশি নেই। ইসলামের বিপক্ষে আপনারা অবস্থান গ্রহণ করছেন।
‘আপনাদের অনুরোধ করি ২০১৩ সাল থেকে তো চেষ্টা করছেন, হেফাজতে ইসলামকে মাইনাস করবার। আপনারা যত চেষ্টা করছেন, আপনাদের সকল অপচেষ্টার জবাব দিচ্ছে আল্লাহ।’
হেফাজতের নায়েবে আমির আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, ‘সাংবাদিক ভাইদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা মিডিয়া হন কিন্তু মিডিয়া লীগ হবেন না। আমরা জানি, আপনারা কারা কী রিপোর্ট করেন। কারা কী ছবি বিদেশে পাচার করেন। সেই তথ্য আমাদের কাছে আছে। এগুলো আমরা সংরক্ষণ করব। তবে অনেক ভালো ও নিরপেক্ষ সাংবাদিক মিডিয়া আছে তাদেরকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।’
দুই মাদ্রাসা থেকে উদ্ধার করা ছুরি কোরবানির জন্য
বুহস্পতিবার ঢাকার দুটি মসজিদ থেকে ৫৯০টি ছুরি উদ্ধার নিয়েও কথা বলেন মামুনুল। পুলিশের অভিযান নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় তিনি চটেছেন গণমাধ্যমের ওপর।
হেফাজতে ইসলামকে কলঙ্কিত করার জন্য নতুন নতুন নাটক সাজানো হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসাগুলোতে সংরক্ষিত কোরবানির ছুরিগুলো কোন কাজে লাগে জানেন না? এগুলো দিয়ে কী করা হয় আপনারা টের পান না?
২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডবের পরের দিন বিজিবির প্রহরা। ফাইল ছবি‘আপনারা যে তামাশা শুরু করেছেন, আগামী দিনে কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা কোরবানির দিনের যে সার্ভিস দেয় সেটা হয়তো বন্ধ করে দিতে হবে। তখন হয়তো আমরা কোরবানির ছুরিগুলো সংরক্ষণ করব না।’
হেফাজত কারও দালালি করে না
হেফাজতে ইসলাম কারও তল্পিবাহক নয় উল্লেখ করে মামুনুল বলেন, ‘আপনার মনের মতো হলো না। বলে দিলেন হেফাজত বিএনপি-জামায়াতের সাথে আঁতাত করেছে। আপনার ভালো লাগল না বলে দিলেন, হেফাজত সরকারের দালালি করছে। কিন্তু হেফাজতে ইসলাম নিজস্ব শক্তির বলে আল্লাহর পথে রয়েছে।
‘হেফাজত যখনই ইসলামের বিরুদ্ধে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হতে দেখবে, কারও রক্তচক্ষুর পরোয়া করবে না, রাজপথে নেমে আসবে।’
আরও কঠোর কর্মসূচির হুমকি
গত শুক্র ও রোববারের চেয়ে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুমকিও এসেছে সমাবেশ থেকে।
মামুনুল হক বলেন, ‘আমিরে হেফাজত জুনায়েদ বাবুনগরীর নির্দেশে আরও বড় ত্যাগ ও কোরবানি স্বীকার করার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আমরা ২০টি জীবন দিয়েছি, প্রয়োজনে হাজারো ভাইয়ের শাহাদাতের রক্ত ঝরবে।’
ইউসুফী বলেন, ‘আমাদের ভাইদেরকে শহিদ করা হয়েছে। আমরা যদি চাইতাম, হাটহাজারী কিংবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া নয়, সারা বাংলাদেশের ৪০০ উপজেলার কোনো উপজেলায় বাকি থাকত না। আমরা ঘেরাও করার সামর্থ্য রাখি। আপনারা আমাদের দুর্বল ভাববেন না।
‘সাবধান হয়ে যান আমাদের ভাইদের একজন কেউ আর গ্রেপ্তার করবেন না। মামলা প্রত্যাহার করুন তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছেন তাদের মধ্যে দিয়ে।’