ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে নারায়ণগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্যসহ জেলার একাধিক নেতা-কর্মীকে।
পুলিশ বলছে, সহিংসতার ঘটনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাদের আসামি করা হয়েছে। তবে বিএনপির নেতাদের দাবি, রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করতেই পুলিশ তাদের আসামি করেছে। মামলায় বিএনপির এক মৃত নেতার নামও রয়েছে।
ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে রোববার নারায়ণগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় থেকে শিমরাইল এলাকা পর্যন্ত সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ ও র্যাব ছয়টি মামলা করে।
মামলায় পুলিশের ওপর হামলা ও হত্যার চেষ্টা, সড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, সরকারি কাজে বাধা, জনগণের জানমালের ক্ষতি, নাশকতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ সহিংসতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
আগুন দেয়া হয় একাধিক গাড়িতে
পুলিশের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন, তার ছেলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর গোলাম মুহাম্মদ সাদরিল, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, আবদুল হাই রাজু, বিলুপ্ত মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন মন্তু, মহানগর ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান বাবুসহ থানা ও ওয়ার্ড বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীকে। তবে এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।
পুলিশের করা মামলায় নাম উল্লেখ করা হয়েছে ১৩৬ জনের। এ ছাড়া তিন হাজারের বেশি অজ্ঞাতপরিচয় আসামি রাখা হয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, প্রাথমিকভাবে পুলিশের তদন্তে বিএনপির নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ জন্য মামলায় বিএনপি নেতাদের নাম উল্লেখ রয়েছে।
তিনি আরও জানান, হেফাজতের নেতাদের পুরো পরিচয় জানা না গেলেও মামলায় তাদেরও আসামি করা হয়েছে। হেফাজতের অনেক কর্মীর নামও রয়েছে।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, রোববার হেফাজতের ডাকা হরতালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত ছিল হরতাল সমর্থকদের দখলে। এদিন তারা ১৮টি যানবাহনে আগুন দেয়। নির্বিচারে চালায় গাড়ি ভাঙচুর। দফায় দফায় বিজিবি ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এতে পুলিশ-সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান সহিংসতায় তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করে নিউজবাংলাকে জানান, হেফাজতের হরতাল তারা সমর্থন করেননি। হেফাজত হরতাল করেছে কিন্তু মামলার আসামি করা হয়েছে বিএনপির জেলা ও থানা পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মীকে। রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করতেই তাদের আসামি করেছে, যাতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো মন্তব্য করতে না পারেন।
বিএনপি এই নেতা জানান, হেফাজতের সহিংতায় ঘটনায় করা মামলায় সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী হোসেন প্রধানকে আসামি করা হয়েছে। তিনি ২০১৬ সালে নাশকতা ও ভাঙচুরের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে ছিলেন। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানোর পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, ‘হরতাল ডেকেছিল হেফাজতে ইসলাম। তাদের ডাকা হরতালে আমাদের সমর্থন ছিল না। অথচ মামলায় আমাদের আসামি করা রয়েছে। রাজনীতির মাঠ থেকে বিএনপিকে সরাতেই এই মামলাগুলো করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, '২০১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলনের পর বিএনপির লোকজনকে আসামি করা হয়েছিল। প্রকৃত ঘটনার সাথে যারা জড়িত, প্রশাসন তাদের আড়াল করছে। আমি জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এই মামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’